মৌসুমি ফসলের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে মিনি কোল্ড স্টোরেজ প্রকল্প চালু

বাংলাদেশের কৃষিতে নতুন সংযোজন হলো কৃষক পর্যায়ের মিনি কোল্ড স্টোরেজ। জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে কৃষি মন্ত্রণালয় বাস্তবায়িত 'জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি প্রকল্প'-এর আওতায় সারাদেশে ১০০টি ফারমার্স মিনি কোল্ড স্টোরেজ বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন হয়েছে।
বুধবার (২৭ আগস্ট) মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে মেদুলিয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘকে প্রতীকীভাবে মিনি কোল্ড স্টোরেজের চাবি হস্তান্তরের মধ্য দিয়ে প্রকল্পের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
তিনি বলেন, 'আজকের এই উদ্যোগ শুধু একটি যন্ত্র বিতরণ নয়, বরং কৃষি খাতে এক নতুন যুগের সূচনা। মৌসুমি সবজির ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত কৃষকরা এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সুবিধা পাবেন। এটি টেকসই, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব।'
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, 'উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ার পর এখন লক্ষ্য সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনা আধুনিক করা। সোলারভিত্তিক ও মোবাইল অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত এই মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষি অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করবে।'
প্রকল্পের তথ্য অনুযায়ী, এই প্রযুক্তি বাংলাদেশের উপযোগী করে তৈরি করা হয়েছে। এতে স্থানীয় ও আমেরিকান হাই-টেক ডিভাইস ব্যবহার করা হয়েছে। দুটি মডেলের কোল্ড স্টোরেজ তৈরি করা হয়েছে- ঘরভিত্তিক এবং কনটেইনারভিত্তিক। সোলারচালিত এ প্রযুক্তিতে তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। ইন্টারনেটভিত্তিক রিয়েল টাইম মনিটরিং থাকায় মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ঘরে বসেই নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
একটি ঘরভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজে ১০ টন পণ্য রাখা যায়, যার খরচ প্রায় ৫ লাখ টাকা। কনটেইনার মডেলের খরচ ১৫ লাখ টাকা।
প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় এ প্রযুক্তির খরচ প্রায় ৭০ শতাংশ কম। বছরে এটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কেজি কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ কমায়, যা ১৪০-১৬০টি গাছের সমান পরিবেশবান্ধব সুবিধা।
প্রকল্প পরিচালক তালহা জুবাইর মাসরুর বলেন, 'দীর্ঘদিন ধরে মৌসুমি সবজি ও ফলের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মৌসুমে অতিরিক্ত উৎপাদন হলে বাজারে দাম পড়ে যায়, তখন কৃষকের লোকসান হয়। এই প্রযুক্তি কৃষকের ঘরেই স্থাপন করা সম্ভব এবং দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও তা সম্প্রসারণের পরিকল্পনা আছে। কৃষকের আয় বৃদ্ধি, ফসলের অপচয় রোধ এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করতে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।'
কৃষি মন্ত্রণালয় জানায়, গত শীতকালে সবজির দরপতনে কৃষকের ক্ষতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়। তখন পরীক্ষামূলকভাবে সাভারের রাজালাখ হর্টিকালচার সেন্টারে একটি ঘরভিত্তিক এবং একটি সৌরচালিত কনটেইনারভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজ নির্মাণ করা হয়।
আট মাসের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর অবশেষে প্রযুক্তিটি কৃষকের হাতে পৌঁছল।