ভারতে বাম্পার ফলন, এশিয়ায় আরও কমবে চালের দাম, কমবে কৃষকের আয়
ভারতে শস্যের বাম্পার ফলন এবং বিশ্বজুড়ে পর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে এশিয়ায় চালের দাম আরও কমবে। এর সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম আমদানিকারক দেশগুলোর স্থানীয় কৃষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য বিদেশি ক্রয় কমানোর সিদ্ধান্তও যুক্ত হয়েছে।
ওলাম এগ্রি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেডের ডেপুটি কান্ট্রি হেড নিতিন গুপ্ত জানিয়েছেন, পশ্চিম আফ্রিকার দেশগুলোর মতো কিছু আমদানিকারকের কাছে বর্তমানে তিন থেকে পাঁচ মাসের ব্যবহারের জন্য চালের মজুদ রয়েছে। তিনি বলেন, বাজারে ক্রমবর্ধমান উদ্বৃত্তের কারণে আঞ্চলিক দামের ওপর চাপ সৃষ্টি হবে।
গত মাসে এশিয়ার বেঞ্চমার্ক মূল্য গত ১০ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। এটি পরিবারের বাজেটে স্বস্তি দিলেও, ভারত থেকে থাইল্যান্ড পর্যন্ত কৃষকদের আয় কমাচ্ছে। বিশ্বের শীর্ষ ক্রেতা ফিলিপাইন তাদের কৃষি শিল্পকে সমর্থন করতে এপ্রিল পর্যন্ত বিদেশি চাল কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে।
থাই রাইস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ২২ অক্টোবর বেঞ্চমার্ক থাই সাদা চালের দাম [৫ শতাংশ ভাঙা চাল] প্রতি টনে ৩৫১ ডলারে নেমে আসে, যা ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। নিতিন গুপ্ত বলেন, থাইল্যান্ড, পাকিস্তান এবং মিয়ানমারের মিল মালিকরা সাদা, সিদ্ধ এবং ভাঙা জাতের চাল ভারতের সরবরাহের চেয়ে অন্তত ৩ শতাংশ কম দামে দিচ্ছে।
ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের বেসামরিক সরবরাহ বিভাগের পরিচালক রোহিত সিং বলেন, 'আমরা উদ্বৃত্ত চাল বিক্রি করতে এবং কৃষকদের সমর্থন করতে নতুন বাজার তৈরির চেষ্টা করছি।' তিনি আরও জানান, রাজ্যের কর্মকর্তারা গত সপ্তাহে বেনিন, কুয়েত এবং উত্তর আফ্রিকার ক্রেতাদের সঙ্গে দেখা করেছেন।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) পূর্বাভাস দিয়েছে, ২০২৫-২৬ সালে বিশ্বব্যাপী চাল উৎপাদন রেকর্ড ৫৫৬.৪ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে। ভারতের কৃষকরা সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে ফসল কাটা শুরু করেছেন, যা বছরের শেষ নাগাদ শেষ হবে।
অতিরিক্ত বৈশ্বিক সরবরাহের কারণে কিছু ক্রেতা এখন আরও সতর্কভাবে চাল কিনছেন। দুবাই-ভিত্তিক ইনভিকটাস ট্রেডিং এফজেডই-এর সিনিয়র বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ধর্মেন্দ্র রাওয়াত বলেন, দাম আরও কমার প্রত্যাশায় তারা ধাপে ধাপে চাল কিনবেন।
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ইরি) সাবেক সিনিয়র অর্থনীতিবিদ সমরেন্দু মোহান্তি বলেন, 'দাম কমার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকবে, কারণ ভারত প্রয়োজনের চেয়ে অনেক বেশি চাল উৎপাদন করছে।' তিনি যোগ করেন, অতিরিক্ত সরবরাহ এবং বিদেশে চাহিদা কম থাকায় অভ্যন্তরীণ বাজারে দাম আরও ১০-১৫ শতাংশ কমতে পারে।
