ঢাকায় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিচার দাবি: ৩ ঘণ্টা পর সড়ক ছাড়লেন রুয়েট শিক্ষার্থীরা

ঢাকায় প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা, সাউন্ড গ্রেনেড, কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বিক্ষোভের পর সড়ক থেকে সরে গেছেন রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (রুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ বুধবার তিন ঘণ্টা অবরোধের পর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে তারা কর্মসূচি তুলে নেন।
বিশ্ববিদ্যালয়টির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ফাহিম আহমেদ হাবিব বলেন, 'আমাদের আগের তিন দফা দাবি তো আছেই। এর সাথে হামলাকারীদের বিচার দাবি করছি। ঢাকা থেকে আবার নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হলে সেটা নিয়ে আমরা আবার রাস্তায় নামবো।'
এর আগে আজ বেলা সাড়ে ৩টার দিকে নগরীর তালাইমারী মোড়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে তারা বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় দাবি আদায়ে বিভিন্ন স্লোগান দেন তারা। তাদের কর্মসূচির ফলে সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
আন্দোলনকারীদের দাবি, প্রকৌশল শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লেখা বন্ধ করতে হবে। ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে নবম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া যাবে না। দশম গ্রেডের চাকরিতে প্রবেশের ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দিতে হবে।
দাবি আদায় না হওয়া আন্দোলন চলবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন শিক্ষার্থীরা।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ
একই দাবিতে চট্টগ্রামে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে নগরীর দুই নম্বর গেইট এলাকায় তারা সড়ক অবরোধ করেন। এতে মুরাদপুর, অক্সিজেন, চকবাজার ও মেডিকেল সংযোগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

গত রোববার (২৪ আগস্ট) থেকে চুয়েট শিক্ষার্থীরা তিন দফা দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচি চালিয়ে আসছেন। এর অংশ হিসেবে তারা ক্লাস বর্জন, ক্যাম্পাস ও সড়ক অবরোধ ও ডিসি অফিসের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন।
উল্লেখ্য, আজ সকালে দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে যমুনা অভিমুখে অগ্রসর হলে তাদের বাধা দেয় পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ও আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জল কামান নিক্ষেপ করে। এ সময় পুলিশ ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয় এবং একাধিক সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়।
তিন দফা দাবিতে গতকাল মঙ্গলবার শাহবাগ মোড় অবরোধ করেছিলেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। পরে আজ তারা আরও দুটি দাবি বাড়িয়ে পাঁচটি দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রাখেন। তাদের দাবিগুলো হলো-
১. স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীকে শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বরোচিত ও ন্যাক্কারজনক হামলার জন্য আন্দোলনকারীদের কাছে সামনাসামনি ক্ষমা চাইতে হবে এবং জবাবদিহি করতে হবে।
২. বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রতিনিধিসহ প্রকৌশল অধিকার আন্দোলনের স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে নিয়ে কমিটির সংস্কার করে পেশকৃত তিন দফা দাবি দ্রুত মেনে নিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে এবং এই মর্মে সংশ্লিষ্ট তিন উপদেষ্টা জনাব মোহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, জনাব আদিলুর রহমান এবং সৈয়দা রেজওয়ানা হাসানকে আজকে এসে এই নিশ্চয়তা প্রদান করতে হবে।
৩. শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনায় ডিসি মাসুদকে বহিষ্কার করতে হবে।
৪. হামলায় আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসায় ব্যয়ভার সরকারকে বহন করতে হবে এবং আন্দোলন চলাকালীন শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। পুলিশ দিয়ে এই যৌক্তিক আন্দোলনে আর কোনো হামলা করা যাবে না।
৫. রোকন ভাইয়ের ওপর হামলাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে এবং চাকরি থেকে বহিষ্কার করতে হবে।
প্রতিবেদনে তথ্য দিয়েছেন আমাদের রাজশাহী ও চট্টগ্রাম প্রতিনিধি