সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি থেকে সাংবাদিকদের জীবন ও সম্পদের সুরক্ষায় আইন হচ্ছে

সাংবাদিকদের জীবন ও সম্পদের আইনি সুরক্ষা দিতে 'সাংবাদিকতার অধিকার সুরক্ষা অধ্যাদেশ, ২০২৫' করতে যাচ্ছে সরকার। ইতোমধ্যে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করেছে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাদেশটি কার্যকর হলে ব্যক্তি, সংস্থা ও কোম্পানির সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি থেকে পেশাদার সাংবাদিকদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষা পাবে।
গত বছরের ১৮ নভেম্বর গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ওই সংস্কার কমিশন সাংবাদিকদের জীবন ও সম্পদ সুরক্ষার জন্য আলাদা আইন করার সুপারিশ করে। সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এই আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, এ অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, যেকোনো ব্যক্তি এমন কোনো কাজ করতে পারবে না, যে কাজের জন্য সাংবাদিকের ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবন বা সম্পদের ক্ষতি হয়। সাংবাদিকের পেশাগত নিরপেক্ষতা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও সরকার যথাযথ উদ্যোগ নেবে, যাতে নিবর্তনমূলক কোনো আইন বা বিধির মাধ্যমে সাংবাদিকের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবন বা সম্পদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত না হয় বা তাদের আইন বহির্ভূতভাবে গ্রেফতার বা আটক না করা হয়।
জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করার কারণে সাংবাদিক যেন কোনো সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়েও সরকারকে পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে অধ্যাদেশে। এমনকি দেশের কোনো বিরোধপূর্ণ এলাকায় সাংবাদিক উপস্থিত থাকলে সেখানেও তথ্য সংগ্রহ, প্রচার ও প্রকাশের জন্য কোনো ধরনের সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানির শিকার না হয়, সেই পদক্ষেপও সরকারকে নিতে হবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, সংবাদকর্মীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং গৃহ, পরিবার ও যোগাযোগের সব মাধ্যম সুরক্ষিত রাখার অধিকার থাকবে এবং সরকার এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। কোনো সাংবাদিককে জীবন, ব্যক্তি স্বাধীনতা ও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা থেকে বঞ্চিত করা যাবে না। বল প্রয়োগ কবে অবৈধভাবে সাংবাদিকের বাসায় প্রবেশ, তল্লাশি বা সম্পদ জব্দ করা যাবে না। আইন অনুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না, যাতে সাংবাদিকের ব্যক্তিগত জীবন, পরিবার, স্বাধীনতা, সুনাম, সম্মান বা সম্পত্তির ক্ষতি হয়।
সাংবাদিককে কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান বা সরকারি কর্মচারী বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ভয়-ভীতির মাধ্যমে বা জোরপূর্বক শারীরিক বা মানসিক চাপ দিয়ে তথ্যসূত্র প্রকাশে বাধ্য করতে পারবে না। পাশাপাশি শারীরিক বা মানসিক চাপ মুক্ত অবস্থায় ও স্বাধীনভাবে এবং অনুকূল পরিবেশে সাংবাদিক যাতে দায়িত্ব পালন করতে পারে, সেটা নিশ্চিত করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সংবাদকর্মী যেন সহিংসতা, হুমকি, হয়রানি এবং বিশেষত যৌন হয়রানির শিকার না হন, সে বিষয়ে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ ও সরকার বিশেষ উদ্যোগ নেবে।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কোনো সংবাদকর্মী নিজ প্রতিষ্ঠানে যেন ভয়-ভীতি বা জোরপূর্বক শারীরিক বা মানসিক চাপমুক্ত অবস্থায় ও স্বাধীনভাবে এবং অনুকূল পরিবেশে দায়িত্ব পালনে সক্ষম হন, সেটা ওই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের মালিক, পরিচালক, বিনিয়োগকারী বা ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা নিশ্চিত করবেন। এর ব্যত্যয় ঘটলে সংবাদকর্মী কমিশনে লিখিতভাবে অভিযোগ করতে পারবেন।
এছাড়া কোনো সংবাদকর্মী যদি সরল বিশ্বাসে কোনো গণমাধ্যমে তথ্য, উপাত্ত, লিখিত বা অডিও বা ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ করে এবং তা প্রকাশের কারণে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, ভিন্ন উদ্দেশ্য প্রমাণিত না যাওয়া পর্যন্ত ওই সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি বা ফৌজদারি মামলা বা অন্য কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না।
অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা কর্তৃপক্ষ, কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠান পেশাগত সংবাদকর্মীর বিরুদ্ধে সহিংসতা, হুমকি ও হয়রানি করলে, তা একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। ওই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তি মাত্রাভেদে অন্যূন এক বছরের কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
তবে যদি কোনো সাংবাদিক অন্য কোনো ব্যক্তির ক্ষতি করার উদ্দেশে এ অধ্যাদেশের অধীন অভিযোগ করার আইনানুগ কারণ নেই জেনেও আবেদন করেন, তাহলে তিনি অনধিক এক বছর কারাদণ্ড অথবা ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।