অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের মামলায় বলসোনারোর ২৭ বছরের কারাদণ্ড শুরুর নির্দেশ
ব্রাজিলের সাবেক প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে বলে মঙ্গলবার রায় দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলেক্সান্দ্রে দে মোরায়েস।
২০২২ সালে নির্বাচনের পর তার উত্তরসূরি প্রেসিডেন্ট লুইজ ইনাসিও লুলা দা সিলভাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর বোলসোনারোর আইনজীবী দল চূড়ান্ত আপিল দায়ের না করার সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে মোরায়েস রায়টি চূড়ান্ত ঘোষণা করার অনুরোধ জানান। এর ফলে ভবিষ্যতে আর কোনো আপিলের সুযোগ পাবেন না বোলসোনারো এবং তাকে ২৭ বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। ইতোমধ্যে এ সাজা কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে।
শনিবার থেকে বোলসোনারো ব্রাজিলের ফেডারেল পুলিশ সদর দপ্তরে আটক রয়েছেন। কারচুপির অভিযোগে পুলিশ হেফাজতে নেওয়ার পর আদালতের নির্দেশে পায়ে ইলেকট্রনিক মনিটর বা অ্যাংকল মনিটর পরানো অবস্থা থেকেই তিনি সেখানে রয়েছেন। মঙ্গলবার মোরায়েস রায় দেন যে বোলসোনারো তার পুরো সাজাটিই ওই সদর দপ্তরেই ভোগ করবেন।
বোলসোনারোর আইনজীবী পাওলো কুনিয়া বুয়েনো 'এক্স'-এ এক পোস্টে বলেন, আদালত রায়টি চূড়ান্ত ঘোষণা করলেও সাবেক প্রেসিডেন্ট দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করার চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
শনিবার বোলসোনারোর আইনজীবীরা তার গ্রেপ্তারকে 'অযৌক্তিক' বলে বর্ণনা করেন এবং দাবি করেন, কারাগারে থাকা অবস্থায় তার স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ছে।
পরে সুপ্রিম কোর্ট একটি ভিডিও প্রকাশ করে, যেখানে আদালতের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বোলসোনারোকে তার অ্যাংকল মনিটর একটি সল্ডারিং আয়রন দিয়ে নষ্ট করার কথা স্বীকার করতে দেখা যায়।
অভিযোগ অনুযায়ী, তিনি ভিডিওতে বলেন যে এটি তিনি গৃহবন্দি অবস্থা থেকে পালানোর উদ্দেশ্যে করেননি; বরং তিনি দাবি করেন যে নতুন কিছু ওষুধ গ্রহণের ফলে সৃষ্ট বিভ্রমের (হ্যালুসিনেশন) কারণে তিনি এ কাজটি করেছেন।
যে মামলাটি শেষ পর্যন্ত বোলসোনারোকে কারাগারে পাঠিয়েছে, তার সূত্রপাত ২০২২ সালের নির্বাচনে লুলা দা সিলভার কাছে পরাজয়ের পরপরই। ফেডারেল কর্তৃপক্ষের দাবি, সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার সহযোগীরা ক্ষমতায় টিকে থাকার অবৈধ উপায় খুঁজতে তৎক্ষণাৎ পরিকল্পনা শুরু করেন। এর ফলেই ২০২৩ সালের ৮ জানুয়ারি ব্রাসিলিয়ায় সরকারি ভবনগুলোর ওপর বোলসোনারো সমর্থকরা নাটকীয় হামলা চালায়।
২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি বোলসোনারোর ঘনিষ্ঠ মিত্র, পুনর্নির্বাচিত হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্র এই মামলাকে তাদের পররাষ্ট্রনীতির অংশ হিসেবে মন্তব্য করতে শুরু করে। জুলাইয়ে ট্রাম্প এমনকি ব্রাজিলের কিছু রপ্তানি পণ্যের ওপর কঠিন শুল্ক আরোপ করেন এবং ব্রাজিলকে বোলসোনারোর বিরুদ্ধে তার ভাষায় 'উইচ হান্ট' বন্ধ করার আহ্বান জানান।
তবে সপ্তাহান্তে যখন বোলসোনারোকে হেফাজতে নেওয়া হয়, তার আগেই হোয়াইট হাউস ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় রপ্তানি পণ্যের জন্য শুল্ক থেকে অব্যাহতি ঘোষণা করে।
শনিবার বোলসোনারোর গ্রেপ্তার নিয়ে সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, তিনি এখনো বিষয়টি শোনেননি, তবে একে 'দুঃখজনক' বলে মন্তব্য করেন।
