‘আপনারে কে এখানে বসাইছে, তার কইলজা খুলিহালাইম’: কুমিল্লায় বিএনপি নেতার কল রেকর্ড ফাঁস

কুমিল্লা-১০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আবদুল গফুর ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আমিরুল কায়ছার এবং কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলামকে আপত্তিকর কথা ও হুমকির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
গতকাল মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ফাঁস হওয়া এক অডিও রেকর্ডে গফুর ভূঁইয়াকে এমন হুমকি দিতে শোনা যায়। অডিওতে প্রফেসর মো. শামছুল ইসলামকে 'আপনারে কে এখানে বসাইছে, তার কইলজা খুলিহালাইম (খুলে ফেলব), আপনার কইলজাও খুলমু।' বলে হুমকি দিতে শোনা যায়।
নাঙ্গলকোট উপজেলার ভোলাইন বাজার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি পদ নিয়ে বিরোধের জেরে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১৮ মে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারের বড় ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন শিশিরকে ভোলাইন বাজার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হিসেবে সুপারিশ করেন কুমিল্লার জেলা প্রশাসক।
সে হিসেবে শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান তা প্রতিষ্ঠানটির প্রধানের কাছে পাঠান। বিষয়টি জানার পর সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়া ফোনে শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে আপত্তিকর কথা বলেন ও নানা হুমকি দেন। পরদিন সশরীরে বোর্ডে গিয়ে সহযোগী নিয়ে চেয়ারম্যানকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের অভিযোগও রয়েছে।
অডিও রেকর্ডে আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে উত্তেজিত কণ্ঠে কলতে শোনা যায়, 'একজন সংসদ সদস্যকে আপনি অপমান করতে পারেন না। আমি আপনার অফিসে এসে আপনাকে অপমান করব। আপনার কত বড় কইলজা হয়েছে আমি দেখমু আপনাকে। আপনাকে কে এখানে বসিয়েছে, তার কইলজা খুলিহালাইম (খুলে ফেলব), আপনার কইলজাও খুলমু। বেয়াদবির একটা সীমা আছে। একটা টোকাইর ইয়া নিছেন আপনি। হে চাকরি করে এখানে, টোকাই। আপনি যে ভেজাল লাগাইছেন আপনাকে এটার দায় দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কতবড় সাহস আপনার আমি দেখে নেব।'
এ সময় শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে বলতে শোনা যায়, 'উনি পরিচয় দিয়েছেন আমাকে উনি খালেদা জিয়ার প্রেস...'। এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে গফুর ভূঁইয়া বলে ওঠেন, 'ঠিক আছে, ঠিক আছে। আপনি আমাকে বলতেন যে এ রকম একটা তদবির আছে, ইয়া আছে, ওখানে তো সে ঢুকতে পারবে না। তার ভাই ঢুকতে পারবে না, আপনি ভেজাল লাগাইছেন। আপনার এটার দায়দায়িত্ব নিতে হবে। আমি কালকে আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। কত বড় সাহস আপনার, আমি দেখে নেব আপনাকে।...আপনাকে আমি বলছি আপনি এটা সুন্দরভাবে করেন, না হলে কিন্তু আপনার ক্ষতি হবে। আপনি অপমানিত হবেন। আমি আপনাকে দেখে নেব। আমি টোকাই না।'
ঘটনার পর বোর্ড চেয়ারম্যানের বিশেষ অনুরোধে ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীন সভাপতি পদ থেকে ১৯ মে অব্যাহতি নেন। ২০ মে সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপি নেতা আবদুল গফুর ভূঁইয়া নিজেই ভোলাইন বাজার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি হন।
এ বিষয়ে জানতে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম ফোন করা হলে বলেন, নাঙ্গলকোটের একটি স্কুলের এডহক কমিটি নিয়ে তিনি আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছেন। তবে অনুষ্ঠানিকভাবে এর চাইতে বেশি কিছু বলতে চাই না।
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. আমিরুল কায়ছার বলেন, আমার সঙ্গে সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল গফুর ভূইয়ার কথা হয়নি। তবে তিনি কেন আমাকে গালমন্দ করেছেন বিষয়টি জানা নেই। এই বিষয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদার বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে গফুর ভূঁইয়া নাঙ্গলকোটে বিএনপির রাজনীতির কবর রচনা করেছেন। ১৯ মে তিনি শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যানকে ফোনে গালমন্দ করার পর ২০ মে সশরীরে বোর্ড অফিসে গিয়ে চেয়ারম্যানকে লাঞ্ছিত করেছেন। ওই দিনই প্রফেসর মো. শামছুল ইসলাম ফোনে আমার ভাই ড. মীর আবু সালেহ শামসুদ্দীনকে ভোলাইন বাজার উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি নেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। চেয়ারম্যানের সম্মানার্থে ওই দিনই তিনি অব্যাহতি নেন।
কল রেকর্ডের বিষয়ে জানতে সাবেক এমপি আবদুল গফুর ভূঁইয়াকে ফোন করা হলে তার ব্যবহৃত ২টি মোবাইল ফোন নম্বরই বন্ধ পাওয়া যায়। যার কারণে তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।