দেশে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা ১০০ ছাড়াল, আগস্টে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা

বাংলাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, জরুরি ব্যবস্থা না নিলে চলতি আগস্টেই মশাবাহিত এই রোগের প্রাদুর্ভাব আরও মারাত্মক হতে পারে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে ১০১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৪ হাজার ১৮৩ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ পরিস্থিতি ইতোমধ্যেই চাপের মুখে থাকা দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থাকে আরও সংকটাপন্ন করে তুলেছে।
আক্রান্তের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েছে। চলতি আগস্টের প্রথম ১০ দিনে ১৯ জন মারা গেছেন। জুলাইয়ে মৃত্যু হয়েছিল ৪১ জনের, যা জুনের ১৯ মৃত্যুর দ্বিগুণেরও বেশি।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বলেন, "পরিস্থিতি সংকটপূর্ণ। ভাইরাস ইতোমধ্যেই সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এখনই জোরালো পদক্ষেপ না নিলে হাসপাতালগুলোতে রোগীদের জায়গা দেওয়া কঠিন হবে। আগস্টে জুলাইয়ের তুলনায় কমপক্ষে তিনগুণ রোগী হতে পারে এবং সেপ্টেম্বরেই সংক্রমণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে পারে।"
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা সবাইকে মশা প্রতিরোধক ব্যবহার, মশারি টানিয়ে ঘুমানো এবং মশার প্রজননে অনুকূল স্থান যেমন—জমে থাকা পানি সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন।
কবিরুল বাশার বলেন, "বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় সমন্বিত স্প্রে কার্যক্রম ও কমিউনিটি-ভিত্তিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানো জরুরি।"
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের পাশাপাশি উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া এবং মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত এডিস মশার বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। আর এই এডিস মশাই ডেঙ্গুর ভাইরাস বহন করে।
ঢাকা এখনও বড় সংক্রমণকেন্দ্র হলেও সারাদেশেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে। রাজধানীর বাইরে বিপুলসংখ্যক রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ফলে গুরুতর রোগী সামলানোর তেমন সক্ষমতা না থাকায় বাড়তি চাপের মুখে পড়েছে স্থানীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবা।
চিকিৎসকেরা সতর্ক করে বলেছেন, ডেঙ্গুর প্রাথমিক পর্যায়েই চিকিৎসা নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। তীব্র পেটব্যথা, বমি, রক্তক্ষরণ বা চরম দুর্বলতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে যেতে হবে, যাতে জটিলতা বা মৃত্যুঝুঁকি কমানো যায়।
এখনও ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ মৌসুম সামনে থাকায় জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের মশা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পাশাপাশি কমিউনিটি-ভিত্তিক সক্রিয়তা এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তা না হলে এটি সাম্প্রতিক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবে পরিণত হতে পারে।
আগের রেকর্ড অনুযায়ী, ডেঙ্গু সংক্রমণের সবচেয়ে মারাত্মক বছর ছিল ২০২৩ সাল। ওই বছর ডেঙ্গুতে ১ হাজার ৭০৫ জনের মৃত্যু হয় এবং আক্রান্ত হয়েছিল ৩ লাখ ২১ হাজারের বেশি মানুষ।