আট দফা দাবিতে ১২ আগস্ট থেকে দেশব্যাপী ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি ঘোষণা দিয়েছে, সরকার তাদের আট দফা দাবি বাস্তবায়ন না করলে আগামী ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে সারাদেশে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট পালন করা হবে। এই দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো, বাণিজ্যিক যানবাহনের অর্থনৈতিক আয়ুষ্কাল ৩০ বছর পর্যন্ত বাড়ানো।
গতকাল (৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের স্টেশন রোডের হোটেল সৈকতে আয়োজিত বিভাগীয় সমাবেশে এ ঘোষণা দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি কফিল উদ্দিন আহমেদ। সমাবেশের আয়োজন করে বৃহত্তর চট্টগ্রাম পণ্য ও যাত্রী পরিবহন মালিক ফেডারেশন এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিটি। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের দাবিসমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এই কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে কফিল উদ্দিন আহমেদ জানান, আট দফা দাবি ইতোমধ্যেই যোগাযোগ উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া হয়েছে। উপদেষ্টা তাদের মধ্যে দুটি দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা সরকারকে জানিয়ে দিয়েছি—সব দাবি মানতে হবে। ১১ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে দাবি না মানলে ১২ থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট পালন করব।'
কফিল উদ্দিন আহমেদ 'সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮'-এর ৯৮ ও ১০৫ ধারা নিয়ে কড়া সমালোচনা করেন। ওই ধারাগুলো অনুযায়ী, দুর্ঘটনায় জড়িত চালক জামিন পাবেন না এবং সর্বোচ্চ পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
তিনি বলেন, 'দুর্ঘটনার মামলা আদালতে চলতে পারে, আদালত শাস্তি দিতে পারে। কিন্তু জামিন পাওয়া একটি সাংবিধানিক অধিকার, যা আদালত নির্ধারণ করবে। আইন করে এটি আটকে দেওয়া উচিত নয়। তাই সংশ্লিষ্ট ধারাগুলো সংশোধন করতে হবে।'
গাড়ির ব্যবহারযোগ্য মেয়াদ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, '২০ বছরের বেশি পুরোনো গাড়িগুলোকে ডাম্পিংয়ের আওতায় এনে সড়ক থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এতে সড়কে চলাচলকারী প্রায় ৮০ শতাংশ গাড়ি উঠিয়ে নেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের বক্তব্য হলো—যে গাড়ির ফিটনেস আছে, তাকে চলতে দিতে হবে। যদি ফিটনেস না থাকে, তা হলে সাময়িকভাবে স্থগিত করুন। ৮৩ বছর বয়সী একজন মানুষ যদি দেশের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারেন, তা হলে ২০ বছরের একটি গাড়িকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে কেন?'
পরিবহন খাতের নেতারা যে মূল দাবিগুলো তুলেছেন, তার মধ্যে রয়েছে: চালকদের জামিনসংক্রান্ত সড়ক পরিবহন আইনের ধারাগুলো সংশোধন, বাণিজ্যিক যানবাহনের মেয়াদ ৩০ বছর করা এবং ততদিন পর্যন্ত ডাম্পিং বন্ধ রাখা, বাণিজ্যিক গাড়িতে অগ্রিম আয়কর বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার, ১২ বছর বয়সী রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানির অনুমতি, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত গাড়ি ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকদের ফেরত দেওয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ির জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা তৈরি, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার ও অবৈধ হালকা যানবাহনের জন্য আলাদা লেন চালু করা, ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং শ্রমিক ফেডারেশনের বিদ্যমান ১২ দফা দাবি বাস্তবায়ন।
সমাবেশে বক্তারা হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সরকার এসব দাবি না মানলে আন্দোলনের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে।
তারা বলেন, 'একবার ধর্মঘট শুরু হলে আর পিছু হটা হবে না।'