গেট পাস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে ধর্মঘট: চট্টগ্রাম বন্দরে ৪ দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি কমেছে ৪৫%

দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম বন্দরে যানবাহন প্রবেশ ফি [গেট পাস ফি] চার গুণের বেশি বাড়ানোর প্রতিবাদে পণ্য পরিবহন কার্যক্রমে চরম অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। ফি বাড়ানোর প্রতিবাদে পরিবহন মালিকদের চলমান ধর্মঘটের কারণে গত চার দিনে কনটেইনার ডেলিভারি প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে।
এর ফলে সৃষ্টি হয়েছে কন্টেইনার জট, এখনও ডেলিভারির অপেক্ষায় আছে প্রায় ৩,৩০০ কন্টেইনার।
জানা গেছে, বন্দর কর্তৃপক্ষ অংশীজনদের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই ভারী যানবাহনের গেট পাস ফি ৫৭ টাকা থেকে প্রায় ৩০০ শতাংশ বাড়িয়ে ২৩০ টাকা নির্ধারণ করে। এর প্রতিবাদে 'চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন' গত ১৫ অক্টোবর থেকে কন্টেইনার পরিবহন স্থগিত রেখেছে।
বন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, ধর্মঘটের আগের দিন, অর্থাৎ ১৪ অক্টোবর বন্দর থেকে ৮ হাজার ৩৬টির মধ্যে ৩ হাজার ৬৫২ টিইইউ (টুয়েন্টি ফুট ইকুইভ্যালেন্ট ইউনিট) কনটেইনার ডেলিভারি করা হয়। পরদিন থেকেই ফি বৃদ্ধির পরিমাণ কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরবরাহ কমতে থাকে। ১৮ অক্টোবর এসে তা নেমে আসে মাত্র ২ হাজার ৭ টিইইউতে।
বেসরকারি ইনল্যান্ড কন্টেইনার ডিপোগুলো (আইসিডি) তাদের কার্যক্রম চালু রাখলেও, ফি বাড়ানোর পর বেশিরভাগ বেসরকারি প্রাইম মুভার ও ট্রেইলার বন্দরে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এর ফলে বন্দরে কন্টেইনার জট তীব্রতর হচ্ছে।
শনিবার চট্টগ্রামে একটি কনভেনশন হলে 'পোর্ট ইউজার্স ফোরাম' আয়োজিত এক প্রতিবাদ সভায় প্রাইম মুভার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন বলেন, 'কোনো আলোচনা ছাড়াই গেট পাস ফি ৫৭ টাকা থেকে ২৩০ টাকা করা হয়েছে। এটি শুধু অযৌক্তিকই নয়, অন্যায়ও বটে।' তিনি ঘোষণা দেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ বর্ধিত ফি প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত ধর্মঘট চলবে।
পরিবহন ধর্মঘটের কারণে আমদানিকারকদের কনটেইনার প্রতি প্রতিদিন ২৪ থেকে ৯৬ ডলার পর্যন্ত অতিরিক্ত 'স্টোরেজ চার্জ' দিতে হচ্ছে।
অন্যদিকে, আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল তৈরি পোশাক কারখানাগুলোর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।
বিজিএমইএ-এর সাবেক পরিচালক বেলায়েত হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'তৈরি পোশাক শিল্প নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে চলে। কাঁচামাল বহনকারী একটি কন্টেইনার একদিন বিলম্বিত হলেও কারখানার মালিকদের শ্রমিকদের মজুরি পরিশোধ করতে হয়। নষ্ট হওয়া সময় পুষিয়ে নিতে ছুটির দিনেও অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিয়ে কাজ করাতে হয়—এটি সরাসরি ক্ষতি।'
চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক পরিচালক মাহফুজুল হক শাহ বলেন, 'মাত্র চার দিনে কন্টেইনার ডেলিভারি ৪৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় অর্থনীতিতে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। এই অচলাবস্থার কারণে আমদানিকৃত নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়বে এবং রপ্তানিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'যে বিষয়টি ১২ ঘণ্টায় সমাধান করা যেত, আমলাতান্ত্রিক অদক্ষতা এবং সিদ্ধান্তহীনতার কারণে তা করতে চার দিন লেগেছে। একটি আন্তর্জাতিক মানের বন্দর এভাবে চলতে পারে না।'
পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুধাবন করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ (সিপিএ) শনিবার সন্ধ্যায় পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের অচলাবস্থা নিরসনের জন্য রোববার সকালে একটি বৈঠকে ডেকেছে।
যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুক ধর্মঘটের কারণে 'কিছুটা প্রভাব' পড়ার কথা স্বীকার করলেও দাবি করেন, এটি বন্দরের কার্যক্রমে বড় কোনো প্রভাব ফেলেনি। তিনি বলেন, 'বন্দরের বর্ধিত হ্যান্ডলিং ক্ষমতা পরিস্থিতি সামাল দিতে আমাদের সাহায্য করেছে।'