এক হাজারেরও বেশি নতুন ওষুধের দ্রুত নিবন্ধন চান ওষুধ উৎপাদকরা

ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের (ডিজিডিএ) কাছে দুই বছর ধরে আটকে থাকা এক হাজারেরও বেশি নতুন ওষুধের দ্রুত নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বাপি)।
সংগঠনের নেতারা বলছেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে এসব ওষুধের নিবন্ধন না হলে আর্থিকভাবে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে শিল্পখাত। কারণ আগামী বছর স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বেরিয়ে গেলে বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ট্রিপস চুক্তি পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে হবে।
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাপির কার্যালয়ে বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন (বাপি) ও বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের যৌথ আয়োজনে এক মতবিনিময় সভায় ওষুধ শিল্প সংশ্লিষ্টরা বলেন, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার বাণিজ্য-সংক্রান্ত মেধাস্বত্ব অধিকার (ট্রিপস) চুক্তি শিগগিরই কার্যকর হলে অনিবন্ধিত ওষুধের জন্য বিপুল পরিমাণ রয়্যালটি এবং ব্যয়বহুল পেটেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হবে—যা ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেবে।
ডব্লিউটিও সদস্য বাংলাদেশ এখনো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) সুবিধাভোগী হওয়ায় ট্রিপস চুক্তির আওতায় ওষুধের পেটেন্টের ক্ষেত্রে ছাড় পাচ্ছে। তবে এই সুবিধা বেশি দিন থাকবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
বাপির মহাসচিব ও ডেল্টা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন বলেন, "বাংলাদেশ ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর এলডিসি থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে উত্তরণ করবে। কিন্তু অন্যান্য আন্তর্জাতিক চুক্তির বাধ্যবাধকতার কারণে ২০২৫ সালের নভেম্বরের পর ট্রিপস চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর হবে। এর মানে, ওই সময়ের পর নতুন যেসব ওষুধ বাজারে আসবে, সেগুলোর জন্য পেটেন্ট সুরক্ষা ও রয়্যালটি খরচ বহন করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "আমরা চাই, নভেম্বরের আগেই সব অনিবন্ধিত ওষুধের নিবন্ধন সম্পন্ন হোক, যেন এসব ওষুধ বর্তমান ট্রিপস ছাড়ের আওতায় থাকতে পারে। এতে পেটেন্ট-সংক্রান্ত জটিলতা ও খরচ বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়ানো যাবে।"
মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাপির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ইউনিমেড ইউনিহেলথের চেয়ারম্যান এম মোসাদ্দেক হোসেন, রেনেটার প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার কবির, বাপির প্রধান নির্বাহী মেজর (অব.) মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান এবং হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রধান নির্বাহী ও বাপির কোষাধ্যক্ষ মোহাম্মদ হালিমুজ্জামান।
রেনেটার প্রধান নির্বাহী কায়সার কবির বলেন, "এলডিসি থেকে উত্তরণ শুধু ওষুধ শিল্প নয়, সামগ্রিক অর্থনীতির ওপর প্রভাব ফেলবে।"
তিনি বলেন, "আমরা ট্রিপস ছাড়, স্বল্পসুদে ঋণপ্রাপ্তির সুযোগ এবং পেটেন্ট সংক্রান্ত নমনীয়তা হারাতে যাচ্ছি। ব্যবসায়ীরা এই উত্তরণ বিলম্বিত করার দাবি জানাচ্ছেন। কম্বোডিয়া ও সেনেগাল নানা চ্যালেঞ্জের কারণে তাদের উত্তরণ পিছিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশ এ বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না।"
কায়সার কবির বলেন, "যদি উত্তরণ পেছানো সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত অন্যান্য দেশের মতো তিন থেকে চার বছরের একটি ট্রানজিশন পিরিয়ড চাওয়া উচিত।"
গ্যাস সংকট ও অবকাঠামো ঘাটতিতে পিছিয়ে এপিআই পার্ক প্রকল্প
এদিকে, ২০০৭ সালে শুরু হওয়া বহুল প্রত্যাশিত অ্যাকটিভ ফার্মাসিউটিক্যাল ইনগ্রেডিয়েন্ট (এপিআই) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক এখনো পুরোপুরি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। সেখানে মূল বাধা হিসেবে দেখা দিয়েছে গ্যাস সংকট ও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার বাউসিয়ায় ২০০ একর জমিতে ২৭টি কোম্পানিকে ৪২টি প্লট বরাদ্দ দেওয়া হলেও গত ১৫ বছরে মাত্র চারটি কোম্পানি উৎপাদনে যেতে পেরেছে।
বাপির মহাসচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, "২০১৭ সালে প্লট পাওয়ার পর কয়েকটি প্রতিষ্ঠান ভারত ও চীনের মতো দেশের সঙ্গে প্রযুক্তিগত অংশীদারিত্ব গঠনের চেষ্টা করে। কিন্তু চীনা বিশেষজ্ঞদের মতে, প্লটের আকার খুব ছোট, আর পার্কটিতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো যেমন–এপিআই রিঅ্যাক্টর, স্টোরেজ বা সলভেন্ট ব্যবস্থাপনার মতো সুবিধা নেই। আর সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো গ্যাস সরবরাহ না থাকা।"
তিনি আরও জানান, বর্তমানে কিছু প্রতিষ্ঠান অব্যবহৃত প্লট একত্র করে যৌথ বিনিয়োগে যাওয়ার কথা ভাবছে। "নীতি সংশোধন করা হয়েছে, কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়ায় আছে। আমরা আশা করছি, ২০২৬ সালের মধ্যে পার্কে ১০ থেকে ১২টি কোম্পানি পূর্ণাঙ্গ উৎপাদন শুরু করতে পারবে।"