বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে ডেলটা ফার্মা, বসবে এআইভিত্তিক উৎপাদন ইউনিট

জাতীয় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এনএসইজেড) নতুন কারখানা স্থাপনে ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে যাচ্ছে ডেলটা ফার্মা লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ডেলটা লাইফ সাইন্সেস পিএলসি। প্রথম ধাপে প্রতিষ্ঠানটি ৩১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বেজা কার্যালয়ে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা) ও ডেলটা লাইফ সাইন্সেস পিএলসি-এর মধ্যে ৩০ একর জমি বরাদ্দের জন্য লিজচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষের প্রতিনিধিরা চুক্তিতে সই করেন।
এনএসইজেড দেশের সবচেয়ে বড় অর্থনৈতিক অঞ্চল, যার আয়তন ৩৩ হাজার ৮০৫ একর। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মীরসরাই এবং ফেনীর সোনাগাজী এলাকায় গড়ে ওঠা এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে ইতোমধ্যে ১৪টি কোম্পানি উৎপাদনে গেছে, আরও প্রায় ২০টি কোম্পানির কারখানা নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে।
ডেলটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমরা প্রাথমিকভাবে ৩১ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবো। আগামী ১২-১৫ বছরের মধ্যে এ বিনিয়োগ ১০০ মিলিয়নে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে।"
চুক্তি অনুযায়ী, ডেলটা লাইফ সাইন্সেস এনএসইজেডে একাধিক ইউনিট স্থাপন করবে। এর মধ্যে থাকবে— বায়োফার্মাসিউটিক্যাল ফিল-ফিনিশ ও ফর্মুলেশন সুবিধা, অনকোলজি ইউনিট (ইনজেকটেবল ও ওরাল সলিড ডোজেজ ওষুধ), হারবাল-নিউট্রাসিউটিক্যাল ও প্রাকৃতিক ওষুধ ইউনিট, এপিআই প্লান্ট, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক উৎপাদন ইউনিট এবং একটি আধুনিক গবেষণা ও উন্নয়ন (আরঅ্যান্ডডি) কেন্দ্র।
প্রতিষ্ঠানটি এনএসইজেডের কারখানায় ক্যানসারের ওষুধ, মনোক্লোনাল অ্যান্টিবডি, এরিথ্রোপোয়েটিন, ফিলগ্রাস্টিম, বিভিন্ন প্রকার ক্রিম ও মলম, পাশাপাশি হারবাল ও নিউট্রাসিউটিক্যাল পণ্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করেছে।
ডেলটা ফার্মা ১৯৬৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। নতুন ব্যবস্থাপনায় ২০০৪ সালের নভেম্বরে পুনরায় যাত্রা শুরু করে এবং ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠানটির কারখানা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিসেস ও আইএসও ৯০০১:২০১৫ মান অনুসারে পরিচালিত হয়। বর্তমানে কোম্পানিটি ১০৯টির বেশি জেনেরিক ওষুধ উৎপাদন করছে এবং প্রায় ১৫টি দেশে রপ্তানি করছে।
ডেলটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, এই বিনিয়োগের লক্ষ্য হলো বাংলাদেশকে উন্নত ওষুধ উৎপাদন ও গবেষণার আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা, বিশেষ করে অনকোলজি ও বায়োফার্মাসিউটিক্যাল খাতে।
তিনি আরও বলেন, "আমরা আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু করতে চাই। তিন বছরের মধ্যে অনকোলজির ওষুধ উৎপাদন শুরু করব।"
বাংলাদেশ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২১৩ মিলিয়ন ডলারের ওষুধ রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৪ শতাংশ বেশি। শিল্প সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডেলটা ফার্মার দীর্ঘমেয়াদি ১০০ মিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগ পরিকল্পনা রপ্তানিযোগ্য ওষুধের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং উচ্চমূল্যের বিশেষায়িত ওষুধ উৎপাদনে বৈচিত্র্য আনবে।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে ডেলটা ফার্মার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. মো. জাকির হোসেন বলেন, "এলডিসি গ্রাজুয়েশনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের এ খাতে বড় বিনিয়োগ করতে হবে। সেই চিন্তা থেকেই আমরা বড় অঙ্কের বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়েছি। লক্ষ্য হচ্ছে বাংলাদেশকে উন্নত ওষুধ উৎপাদন ও গবেষণার আঞ্চলিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।"
তিনি আরও বলেন, "দেশের চাহিদার ৯৮ শতাংশ ওষুধ আমরা দেশেই উৎপাদন করছি। যদি এসব ওষুধ আমদানি করতে হতো, তাহলে প্রায় ৭ থেকে ১১ বিলিয়ন ডলার খরচ পড়ত। আমরা নতুন প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি রপ্তানিও করব।"
ডা. জাকির নীতি সহায়তার দাবি জানিয়ে বলেন, "এই খাতের প্রবৃদ্ধি টিকিয়ে রাখতে সরকারি নীতি সহায়তা প্রয়োজন।"
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) এবং বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন অনুষ্ঠানে বলেন, "আমরা ওষুধ খাতকে রপ্তানি পণ্যের তালিকায় অগ্রাধিকার দিয়েছি। সরকার থেকে যেকোনো সহায়তা প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে।"
তিনি আরও জানান, "বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আকৃষ্ট করতে আমরা ১৯টি খাত চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে আটটি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে— যার একটি হলো ওষুধ শিল্প। আমরা বিশ্বাস করি, এ খাতে বিনিয়োগের জন্য সব অনুকূল পরিবেশ রয়েছে এবং রপ্তানি আরও বাড়ানোর বিপুল সুযোগ আছে।