৩৫ শতাংশ শুল্ক এড়াতে পেরেছি, আমাদের পোশাক খাত ও সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের জন্য সুখবর: খলিলুর রহমান

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর পাল্টা শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) কমিয়ে ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। আজ শুক্রবার (১ আগস্ট) বাংলাদেশসহ আরও বেশ কয়েকটি দেশের ওপর আরোপিত শুল্কের পরিমাণ ঘোষণা করেছে ওয়াশিংটন।
এ বিষয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেছেন, 'আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক খাত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের জন্য বড় সুখবর।'
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসি থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে খলিলুর রহমানের মন্তব্য তুলে ধরা হয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'আজ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বের ৭০টি দেশের আমদানি পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। এ সিদ্ধান্ত এসেছে ১ আগস্টের চূড়ান্ত সময়সীমার ঠিক আগে, যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করার সময়সীমা শেষ হচ্ছে।'
এতে বলা হয়, 'শুধু শুল্ক হারই নয়, এসব চুক্তিতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ নীতির সংস্কার নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, এসব নীতিই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ভারসাম্যহীনতার অন্যতম কারণ। পাশাপাশি আলোচনায় অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোও অন্তর্ভুক্ত ছিল। আলোচনার অংশ হিসেবে দেশগুলোর প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য কেনার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করার অনুরোধ জানানো হয়, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমানো সম্ভব হয়।'
'চুক্তিগুলোর আওতায় বহু জটিল বিষয় থাকায় আলোচনা প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও জটিল হয়েছে। শুল্কছাড়ের বিষয়টি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক কমানোতেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং এটি আমদানি বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা, অশুল্ক বাধা দূর করা এবং নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ মোকাবিলায় অংশীদার দেশগুলোর সহযোগিতার ওপরও নির্ভর করেছে।'
'ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, প্রতিটি দেশের জন্য নির্ধারিত শুল্কহার নির্ভর করবে তারা এসব ক্ষেত্রে কতটা অঙ্গীকার করেছে, তার ওপর।'
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, 'বাংলাদেশ ২০ শতাংশ শুল্কহার পেয়েছে—যা দেশটির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী পোশাক রপ্তানিকারক দেশগুলোর মতোই। যেমন শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম, পাকিস্তান ও ইন্দোনেশিয়া—যাদের হার ১৯ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে। ফলে পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান অক্ষুণ্ন থাকছে। বিপরীতে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি পূর্ণাঙ্গ চুক্তিতে পৌঁছাতে না পারায় তাদের শুল্কহার ২৫ শতাংশ নির্ধারিত হয়েছে।'
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও প্রধান আলোচক ড. খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করেছি, যাতে আমাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি জাতীয় স্বার্থ ও বাস্তব সক্ষমতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার ছিল পোশাক শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া। পাশাপাশি আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য কেনার প্রতিশ্রুতিতেও গুরুত্ব দিয়েছি, যা একদিকে আমাদের খাদ্য নিরাপত্তার লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিভিত্তিক রাজ্যগুলোর সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক গড়তেও সহায়তা করবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আজ আমরা সম্ভাব্য ৩৫ শতাংশ প্রতিশোধমূলক শুল্ক এড়াতে পেরেছি। এটি আমাদের পোশাক খাত ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট লাখো মানুষের জন্য বড় সুখবর। একই সঙ্গে আমরা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছি এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভোক্তা বাজারে প্রবেশের নতুন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে।'