অপপ্রচার ও ভুল তথ্য মোকাবিলায় সম্মিলিত পদক্ষেপ চায় বাংলাদেশ
সাইবার নিরাপত্তা ঝুঁকি, ভুল তথ্য এবং অপপ্রচার মোকাবিলায় কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভের (সিএসসি) সদস্য দেশগুলোকে আরও শক্তিশালী ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ।
আজ বৃহস্পতিবার (২০ নভেম্বর) ভারতের নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সিএসসি-এর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের (এনএসএ) সপ্তম সম্মেলনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এ আহ্বান জানান জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান।
খলিলুর রহমান বলেন, 'সাইবার নিরাপত্তা, ভুল তথ্য ও অপপ্রচার মোকাবিলার চ্যালেঞ্জগুলো কাটিয়ে উঠতে আমাদের সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। এ বিষয়ে আমি সিএসসির কার্যকর পদক্ষেপের প্রত্যাশা করি।'
রোহিঙ্গা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা (এনএসএ) খলিলুর রহমান এই সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। সেখানে তিনি আঞ্চলিক নিরাপত্তা সহযোগিতা জোরদারের বিষয়ে বাংলাদেশের অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন এবং সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন ও সামুদ্রিক সুরক্ষার ক্ষেত্রে সম্মিলিত উদ্যোগের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
তার বক্তব্যে সাইবার নিরাপত্তার বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পায়। খলিলুর রহমান বলেন, 'দ্রুত প্রযুক্তিগত প্রসার এবং ডিজিটাল ঝুঁকি বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত 'ভুল তথ্য ও অপপ্রচারের অব্যাহত আক্রমণের' শিকার হচ্ছে। দেশের সাইবার স্পেস এবং গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো রক্ষার ওপর জোর দিয়ে তিনি সতর্ক করেন যে, এ ক্ষেত্রে কেবল জাতীয় প্রচেষ্টাই যথেষ্ট নয়।'
আঞ্চলিক ঐক্যের আহ্বান জানিয়ে তিনি সিএসসি সদস্যদের সাইবার হুমকি ও অপপ্রচার মোকাবিলায় সম্মিলিত প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত ও বাস্তবায়নের অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, 'আমাদের অভিন্ন চ্যালেঞ্জগুলো একসঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে।'
বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সিএসসির সহযোগিতার পাঁচটি অগ্রাধিকার খাতকে 'সম্মিলিত নিরাপত্তা, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা এবং যৌথ সমৃদ্ধি' অর্জনের মূল স্তম্ভ হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ আঞ্চলিক নিরাপত্তা উদ্যোগে তার দ্বৈত ভূমিকা 'অবিচলভাবে' পালন করে যাচ্ছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সামুদ্রিক নিরাপত্তা বৃদ্ধি, জলদস্যুতা ও আন্তঃদেশীয় অপরাধ দমন এবং সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় সহযোগিতার কথা তুলে ধরেন তিনি। ঢাকার আপসহীন অবস্থানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, 'যেকোনো পরিস্থিতিতে সব ধরনের সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ "জিরো টলারেন্স" নীতি বজায় রেখেছে।'
ভারত এই কলম্বো সিকিউরিটি কনক্লেভ (সিএসসি) সম্মেলন আয়োজন করে। এতে সদস্য দেশ হিসেবে মালদ্বীপ, মরিশাস, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ অংশ নেয়। পর্যবেক্ষক দেশ হিসেবে সেশেলস এবং আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে মালয়েশিয়া বৈঠকে যোগ দেয়।
বৈঠকে ড. খলিলুর রহমান ভারতের এনএসএ অজিত দোভালকে ধন্যবাদ জানান এবং সিএসসির মহাসচিবের সাম্প্রতিক কার্যক্রম বিষয়ক প্রতিবেদনের প্রশংসা করেন।
তিনি উল্লেখ করেন, কনক্লেভের সনদে উল্লিখিত সার্বভৌমত্ব, সমতা, আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করার নীতির ভিত্তিতেই সিএসসির সঙ্গে বাংলাদেশের কার্যক্রম পরিচালিত হবে।
পারস্পরিক বিশ্বাস, শ্রদ্ধা এবং অংশীদারত্বমূলক সুবিধার ওপর গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, 'ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এবং আঞ্চলিক উন্নয়নের জন্য হুমকি হতে পারে এমন যেকোনো অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক শক্তিকে প্রতিরোধ করতে বাংলাদেশ কনক্লেভ সদস্যদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতে প্রস্তুত।'
এর আগে বুধবার ড. খলিলুর রহমান তার ভারতীয় সমকক্ষ অজিত দোভালের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। এসময় তিনি দোভালকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, 'তারা সিএসসির কার্যক্রম এবং দ্বিপাক্ষিক গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন।'
