ওসমানী বিমানবন্দরে দুর্ঘটনা: নিহত রুম্মান ছিলেন এইচএসসি পরীক্ষার্থী, বিদেশ যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন

সিলেট এমএজি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিং ব্রিজের চাকা বিস্ফোরণে নিহত কর্মী রুম্মান আহমদ (২২) এ বছরের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। আর দুটি পরীক্ষা বাকি ছিল তার।
রুম্মান দেশের বাইরে যাওয়ারও চেষ্টা করছিলেন। একাধিকবার পুলিশের চাকরির জন্যও পরীক্ষা দিয়েছিলেন। কিন্তু চাকরি হয়নি।
তার বাবা ও বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) দুপুরে ওসমানী বিমানবন্দরের বোর্ডিং ব্রিজের চাকা বদলানোর সময় একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়। এতে রুম্মান মারা যান, আহত হন এনামুল হক নামের আরেক কর্মী।
রুম্মান নগরের বিমানবন্দর থানাধানী টিলাপাড়া লুছাই গ্রামের মো. মছর মিয়ার ছেলে। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় ছিলেন তিনি। বাবা মছর দিনমজুর। পরিবারের আর্থিক অসচ্ছলতার কারণেই পড়ালেখার পাশপাশি বিমানবন্দরে চাকরি করতেন রুম্মান।
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, ছেলের লাশের পাশে বিলাপ করছেন রুম্মানের বাবা মছর মিয়া।
কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, 'সকালে কাজে যাওয়ার সময় তাকে আমি ঘুম থেকে ডেকে তুলেছি। সকাল ৮টা-সাড়ে ৮টায় সে ঘর থেকে বেরিয়ে যায়। আমি কাজে থাকায় তখন তার সাথে দেখা হয়নি। এরপর দুপুরে এই খবর শুনলাম।'
মছর মিয়া বলেন, 'আমার ছেলে এবার এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে। কয়েকটা পরীক্ষা পিছিয়েছে। নতুবা এত দিনে পরীক্ষা শেষ হয়ে যেতো। সে আমাকে বলেছে, "আব্বা পরীক্ষা শেষ হতে আরও কয়দিন লাগবে"।'
পড়ালেখার পাশপাশি রুম্মান কাজ করতেন জানিয়ে মছর মিয়া বলেন, 'আমার একার পক্ষে সংসার চালানো কষ্টকর। তাই তাকে বলেছিলাম, টুকটাক কাজ করতে। সে তাই বিমানবন্দরে কাজ নিয়েছিল। তার জন্য ভালো কোনো চাকরির চেষ্টা করছিলাম। আজ সবকিছু শেষ হয়ে গেল।'
এই ঘটনার তদন্ত দাবি করে তিনি বলেন, 'আমি এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই। কীভাবে আমার ছেলে মারা গেল, তা জানতে চাই।'
রুম্মানের মরদেহ বহনকারী অ্যাম্বুলেন্সে বসা ছিলেন তার এক বন্ধু। তিনি বলেন, 'আমি আর রুম্মান একসাথে পুলিশের চাকরিতে ইন্টারভিউ দিয়েছিলাম। আমার চাকরি হয়েছে। তার হয়নি। এরপর থেকে সে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করছিল।'
এইটুকু বলেই রুম্মানের মরদেহ জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন তার এই বন্ধু।
এই দুর্ঘটনায় আহত আহত বিমানবন্দর থানার মহালদিগ গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে এনামুল হক রাগীব রাবেয়া হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন আছেন।
দুর্ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চারজন বোর্ডিং ব্রিজের চাকা পরিবর্তন করছিলাম। চাকার দুই পাশে দুজন করে ছিলাম। আমি আর রুম্মান ছিলাম একপাশে। হঠাৎ একটি চাকা বিস্ফোরিত হয়। এরপর আর কিছু বলতে পারি না। হাসপাতালে এসে জ্ঞান ফিরে।'
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণের অংশ হিসেবে বোর্ডিং ব্রিজের পুরনো চাকা খুলে নতুন চাকা বসানোর কাজ করছিলেন 'সানরাইজ এন্টারপ্রাইজ' নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা।
ওসমানী বিমানবন্দরের পরিচালক হাফিজ আহমদ জানান, এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।