বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ড গড়তে জাপানকে বিনিয়োগের আহ্বান

দেশের শিপ ব্রেকিং বা জাহাজভাঙা শিল্পকে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই রিসাইক্লিং খাতে রূপান্তরের লক্ষ্যে জাপানকে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। দীর্ঘদিন ধরে এই খাত নিয়ে যে শ্রমিক নিরাপত্তা, দূষণ ও অনানুষ্ঠানিক কার্যক্রমের অভিযোগ রয়েছে, তা দূর করতেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
সোমবার (২৮ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত 'দ্য শিপ রিসাইক্লিং ইন্ডাস্ট্রি অব বাংলাদেশ ইন কোলাবরেশন উইথ জাপান' শীর্ষক সেমিনারে শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ওবায়দুর রহমান জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সির (জাইকা) প্রতি পরিবেশবান্ধব শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ড গঠনে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
সেমিনার শেষে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "ছোট ইয়ার্ডকে বড় পরিবেশবান্ধব ইয়ার্ডে রূপান্তরে প্রতিটি ইয়ার্ডে ২০ থেকে ৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন। এর মাধ্যমে দ্রুতই ৫০টি ইয়ার্ডকে গ্রিন ইয়ার্ডে রূপান্তর করা সম্ভব।"
শিল্প মন্ত্রণালয় ও জাইকার যৌথ আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে জানানো হয়, দেশের পুরো শিপ ব্রেকিং খাতকে পরিবেশবান্ধব করতে মোট ২,৫০০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, "এই খাতে অর্থায়নই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আমরা বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি, যাতে গ্রিন ইয়ার্ড উন্নয়নের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা যায়।"
বাংলাদেশ শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে নিবন্ধিত শিপ রিসাইক্লিং ইয়ার্ডের সংখ্যা ১৫৬টি। তবে বর্তমানে মাত্র ৫০টি ইয়ার্ড সক্রিয় রয়েছে।
খাতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এরমধ্যে ১৪টি ইয়ার্ড আন্তর্জাতিক মানদণ্ড পূরণে সম্পূর্ণ সক্ষম, আর ২০টি ইয়ার্ড আপগ্রেডের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
সেমিনারে উপস্থাপিত বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের তথ্যানুযায়ী, দেশে শিপ রিসাইক্লিং শিল্পের বার্ষিক টার্নওভার প্রায় ১২,৭৫০ কোটি টাকা।
শিপ রিসাইক্লিং খাতে সরাসরি ২০ হাজার থেকে ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয় এবং পরোক্ষভাবে এই খাতের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ১০ লাখের বেশি মানুষ।
বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং বোর্ডের মহাপরিচালক এএসএম শফিউল আলম তালুকদার বলেন, পরিবেশবান্ধব গ্রিন ইয়ার্ড প্রযুক্তি উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্ভাবনী সহযোগিতার পাশাপাশি জাপানি বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জাহাজ অনুমোদন, সার্টিফিকেশন ও পরিদর্শন প্রক্রিয়াগুলোকে ডিজিটাল করার প্রয়োজন রয়েছে।
আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী পরিবেশ সুরক্ষা ও শ্রমিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে যে ইয়ার্ডে জাহাজ রিসাইক্লিং করা হয়, সেটিই 'গ্রিন শিপইয়ার্ড' হিসেবে পরিচিত।
২০২৩ সালে হংকং কনভেনশন অনুসমর্থনের মাধ্যমে বাংলাদেশ শিপ রিসাইক্লিং খাতে টেকসই রূপান্তরের পথ উন্মুক্ত করেছে।
জাইকা বাংলাদেশের প্রধান প্রতিনিধি তোমোহিদে ইচিগুচি শিপ ব্রেকার্স অ্যান্ড রিসাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, শিল্পের রূপান্তরে আরও সক্রিয় ও উদ্যোগী হতে হবে।
সেমিনারে তিনি বলেন, "আমরা অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের আহ্বান জানাই—আপনারা এগিয়ে আসুন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার সঙ্গে কার্যকরভাবে যুক্ত হোন, বিনিয়োগ আকর্ষণ করুন এবং নিজস্ব জনবল উন্নয়নে বিনিয়োগ করুন।"
তিনি আরও বলেন, "এই রূপান্তরের জন্য প্রচেষ্টা প্রয়োজন, তবে এর মাধ্যমে নতুন অর্থায়নের সুযোগ ও বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে—যা এই শিল্পের জন্য বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেবে।"
ইচিগুচি নিশ্চিত করেন, জাইকা তাদের বাণিজ্যিক প্রকল্প কাঠামোর মাধ্যমে এই রূপান্তর প্রক্রিয়ায় সক্রিয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।