বেজা, বেপজা-সহ সব বিনিয়োগ সংস্থাকে ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক করার পরিকল্পনা সরকারের

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে দেশের সব ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন এজেন্সি (আইপিএ) বা বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাকে একীভূত করে একটি একক প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের পরিকল্পনা করেছে সরকার।
নতুন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদ গঠনের প্রক্রিয়া ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য ও ব্যবসা উন্নয়ন বিভাগের প্রধান নাহিয়ান রহমান রচি।
রোববার (১৯ অক্টোবর) তিনি আরও জানান, "আগামী মাসে একটি আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হবে, যারা নতুন সংস্থার কাঠামো ও আইনি কাঠামো তৈরি করবে।"
বর্তমানে কার্যরত বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাগুলো হলো—বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা), বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা), পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ কর্তৃপক্ষ (পিপিপিএ), বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিএসসিআইসি) এবং বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ।
রচি বলেন, দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ানোর বৃহত্তর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, "শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের সভাপতিত্বে একটি উচ্চপর্যায়ের সরকারি কমিটি সংস্কার প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে। এ পর্যন্ত কমিটির দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।"
রচি জানান, কমিটি দুটি প্রধান কাজ চিহ্নিত করেছে। "প্রথমত, পরিচালনা পর্ষদের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়াকে কেন্দ্রীভূত করা। দ্বিতীয়ত, একীভূত কাঠামো তৈরি ও বাস্তবায়ন তদারকির জন্য একটি স্বাধীন আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করা।"
তিনি আরও জানান, "নতুন সস্থার যে পরিচালনা পর্ষদ হবে তার একটি খসড়া গত ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে প্রস্তুত করা হয়েছে এবং এ-সংক্রান্ত আইনের খসড়াও জমা দেওয়া হয়েছে।"
পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগের কার্যক্রম চলতি মাসের শেষের দিকে শেষ হবে বলে জানান তিনি। এবং নভেম্বরের ১ তারিখ থেকে তারা কাজ শুরু করবে। তিন মাসের মধ্যে তারা রূপরেখা দেবে এবং আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যেই একীভূতকরণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নাহিয়ান রচি আরও বলেন, "আমরা বিনিয়োগকারীদের স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে এগোচ্ছি। কোনো বিচ্যুতি যেন না হয়, সেজন্য পূর্বের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেওয়া হচ্ছে।"
বিডা সূত্রে জানা গেছে, গত সরকারের সময় সংস্কার প্রক্রিয়ার শুরুতে সংস্থাটি প্রায় ২৫০ থেকে ৩০০ বিনিয়োগকারী এবং জাইকা, জেট্রোসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরামর্শ করে। বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ ছিল—বাংলাদেশে এখনো বিনিয়োগ প্রচারের জন্য কোনো একক কর্তৃপক্ষ বা সিঙ্গেল উইন্ডো ব্যবস্থা নেই। সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের অভাবে তারা একাধিক দপ্তরে আলাদা ফরম পূরণ করতে বাধ্য হন।
নাহিয়ান রহমান রচি বলেন, "বিনিয়োগকারীদের সাধারণ অভিযোগ—কমন ইস্যুগুলো ইন্টিগ্রেট করা জরুরি। এজন্য একটি রিফর্ম কমিশন কাজ করছে। রিফর্ম কমিশনসহ বিভিন্ন স্টাডি এবং 'হোয়াইট পেপার'-এও ইনভেস্টমেন্ট প্রমোশন ব্যবস্থায় সিঙ্গেল-পয়েন্ট অ্যাপ্রোচের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরা হয়েছে।"
অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যও তার 'হোয়াইট পেপার'-এ বিনিয়োগ প্রচার সংস্থাগুলোর বিভাজন দূর করার সুপারিশ করেছিলেন।
এদিকে, পরিকল্পিত একীভূতকরণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বেপজা ও বেজার কর্মকর্তারা জানান, অনেক বিনিয়োগকারী এমন সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে আগ্রহী, যারা ইতোমধ্যে ভালোভাবে কাজ করছে। অথচ কর্মদক্ষতায় পিছিয়ে থাকা সংস্থাগুলোকে এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত করলে তা হিতে বিপরীত হতে পারে এবং বিনিয়োগ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে মনে করছেন তারা।
তাদের যুক্তি, সব সংস্থাকে একত্র করা সবচেয়ে কার্যকর সমাধান নয়। বরং একটি একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম বিনিয়োগকারীদের জন্য বেশি কার্যকর হতে পারে। এরই মধ্যে 'বাংলাবিজ' নামে একটি প্ল্যাটফর্ম চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, যা বিনিয়োগ সহায়তায় ওয়ান-স্টপ সার্ভিস (ওএসএস) দিচ্ছে বলে তারা জানান।
বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় গত ১৩ এপ্রিল অনুষ্ঠিত বিডার তৃতীয় পরিচালনা পর্ষদ সভায়, যেখানে সভাপতিত্ব করেন বিডার পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সূত্র জানায়, সভায় প্রধান উপদেষ্টা সতর্ক করে বলেন—নতুন সংস্থাটি একটি 'মেগা অথরিটি' হবে, তবে ভুল নেতৃত্ব নির্বাচন করা হলে এটি 'বিপর্যয়ে' পরিণত হতে পারে।