বিশ্বের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশ জায়গা পাচ্ছে না: সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিন
বিশ্বের পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগ বিষয়ক আলোচনায় বাংলাদেশের কোনো উপস্থিতি নেই বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।
তিনি বলেন, 'আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক পর্যায়ে করাচি, লাহোর, মুম্বাই, ব্যাংকক, কলম্বো এমনকি ভুটানের স্টক মার্কেট নিয়ে নিয়মিত আলোচনা হলেও বাংলাদেশি পুঁজিবাজার সেখানে জায়গা পাচ্ছে না।'
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজিত আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় রিয়েল-টাইম ক্যাপিটাল মার্কেট প্রতিযোগিতা 'নেক্সটর ২.০'-এর পুরস্কার বিতরণ ও সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ব্যাংকিং খাতের প্রসঙ্গ টেনে ফরাসউদ্দিন বলেন, 'কেন দেশের সঞ্চয় গুরুতর সংকটে থাকা ব্যাংকিং ব্যবস্থায় যাচ্ছে কিন্তু স্টক এক্সচেঞ্জে যাচ্ছে না, তা খুঁজে বের করা এখন বড় চ্যালেঞ্জ।'
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের দীর্ঘ ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন, 'গত প্রায় ৭০ বছরে—প্রথমে পূর্ববঙ্গ সরকার এবং পরে বাংলাদেশ সরকার—ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে শক্তিশালী করতে নানামুখী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবু আন্তর্জাতিক অর্থ ও বিনিয়োগ সম্প্রদায় সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশের স্টক মার্কেটকে এড়িয়ে গেছে।'
সম্পদ বণ্টনের বৈষম্য নিয়ে তিনি বলেন, 'দেশের মোট সম্পদের বড় অংশ মাত্র অল্প কয়েকজনের হাতে কেন্দ্রীভূত হয়ে পড়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং সাম্প্রতিক গণআন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। এমন বাস্তবতায় ক্যাপিটাল মার্কেটের (পুঁজিবাজার) ভূমিকা আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।'
২০০০ সালে 'সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি সিস্টেম' (সিডিএস) গঠনের প্রসঙ্গ টেনে ফরাসউদ্দিন বলেন, 'রাজনৈতিক বিবৃতি ও অনাস্থার কারণে শুরুতেই সেই উদ্যোগ ব্যর্থ হয়ে পড়ে, যা ক্যাপিটাল মার্কেটে আস্থার বড় ক্ষতি করে।'
তার মতে, এ খাতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো—স্বাধীনচেতা, সৎ ও নির্ভীক ব্যক্তিদের স্টক এক্সচেঞ্জ ও পুঁজিবাজারের পরিচালনায় (গভর্ন্যান্স) যুক্ত করতে না পারা। বরং প্রশ্নবিদ্ধ ও সন্দেহজনক চরিত্রের মানুষদের সেখানে জায়গা দেওয়া হয়েছে, যা বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট করেছে।
প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, 'সেখানে যোগ্য ও স্বাধীন পরিচালকদের উচ্চ সম্মানী দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়, যাতে তারা সময়, সাহস ও বিবেচনা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। বাংলাদেশে সরকার ও কর্পোরেট সেক্টর এখনো সেই পর্যায়ের দৃঢ় সংকল্প দেখাতে পারেনি।'
তবে আশাবাদী থাকার কথা জানিয়ে ফরাসউদ্দিন বলেন, 'একদিন ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ দেশের মানুষের আস্থা অর্জন করবে। তখন মানুষ আয় থেকে খরচ বাদ দিয়ে যে সঞ্চয় থাকে, তা ক্যাপিটাল মার্কেটে বিনিয়োগ করবে এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীরাও বাংলাদেশের সঙ্গে ব্যবসায় আস্থাশীল হবে।'
উল্লেখ্য, এবারের প্রতিযোগিতায় দেশের ৩০টির বেশি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৬০টি দল ও ৭৫০-এর বেশি শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মোট ২ লাখ ৫ হাজার টাকার অর্থ পুরস্কারের এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হয় বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব প্রফেশনালসের (বিইউপি) দল 'টিম এফএমভি'। প্রথম রানার্সআপ হয় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির দল 'এনএসইউয়ার্স ফ্রম ডিএএফ' এবং দ্বিতীয় রানার্সআপ হয় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির দল 'সিঙ্গুলারিটি'।
