জাহাজভাঙা শিল্পে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় ভারত: দেবে ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার প্রণোদনা

ভারত তার জাহাজভাঙা শিল্পকে চাঙ্গা করতে ৪৫৪ মিলিয়ন ডলার প্রণোদনা দেওয়ার পরিকল্পনা করছে। এর মাধ্যমে দেশটি এই খাতে শীর্ষস্থানে থাকা বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী পাকিস্তানের থেকে নিজেদের বাজার পুনরুদ্ধার করতে চাইছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, সরকার ২০২৬ সাল থেকে ১০ বছরের জন্য এই আর্থিক সুবিধা দেবে। চলতি সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা প্রস্তাবটি অনুমোদন দেবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি এখনও প্রকাশ করা হয়নি।
প্রণোদনা প্যাকেজের মধ্যে জাহাজ মালিকদের জন্য একটি 'ক্রেডিট নোট' অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এটি ব্যবহার করে তারা ভারতে জাহাজ ভাঙতে আনলে জাহাজের স্ক্র্যাপ মূল্যের প্রায় ৪০ শতাংশ ফেরত পাবেন। তিন বছর মেয়াদি এই প্রতিশ্রুতিপত্র ভারতে নির্মিত জাহাজ কেনার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যাবে। মালিকেরা চাইলে একাধিক ক্রেডিট নোট একসঙ্গে ব্যবহার বা বিক্রি করতে পারবেন বলেও জানানো হয়েছে।
এ আর্থিক প্রণোদনার লক্ষ্য হলো বৈশ্বিক জাহাজ পুনর্ব্যবহার বাজারে ভারতের অবস্থান শক্ত করা। ভারতের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে পুরোনো জাহাজের এক-তৃতীয়াংশ ভারতে ভাঙা হয়েছিল; যেখানে বাংলাদেশে ভাঙা হয় ৪৬ শতাংশ।
এ বিষয়ে ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় জাহাজ ভাঙার কেন্দ্র আলং ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত। দেশটিতে আসা জাহাজের ৯৮ শতাংশই এখানে ভাঙা হয়। তবে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে সস্তা শ্রম সুবিধার কারণে ভারতের বাজার ক্রমশ সংকুচিত হচ্ছে।
তবুও সম্প্রতি ব্যবসা কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের পর তেলের ট্যাঙ্কার ভাঙার হার কমে যাওয়ায় দীর্ঘদিন মন্দায় ছিল খাতটি। কিন্তু সাম্প্রতিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতায় নানা ধরনের জাহাজের রুট পরিবর্তন হওয়ায় ভাড়া বেড়েছে। এতে জাহাজ মালিকরা তাদের পুরনো জাহাজগুলোর আয়ুষ্কাল যতটা সম্ভব বাড়িয়ে ব্যবহার করতে উৎসাহিত হয়েছেন।
এছাড়াও, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা নিজেদের দিকে নিয়ে আসতে ভারত তার পূর্ব উপকূলে একটি নতুন জাহাজ ভাঙার কেন্দ্র স্থাপনের কথা ভাবছে।
এদিকে, দেশীয় জাহাজ নির্মাণকে উৎসাহ দিতে চলতি মাসেই ২৫০ বিলিয়ন রুপি মূল্যের সামুদ্রিক উন্নয়ন তহবিল অনুমোদনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নরেন্দ্র মোদির সরকার। ২০২৬ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরের বাজেটের অংশ হিসেবে এ তহবিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।