যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনা কেড়ে নিল ৯ বছরের সায়মার ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন

রাজধানী উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে চিরতরে নিভে গেল তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী সায়মা আক্তারের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন।
মাত্র ৯ বছরের সায়মা স্বপ্ন দেখত বড় হয়ে মানুষের সেবা করবে। গাজীপুরের বিপ্রবর্ধা গ্রামের এই শিশুটিকে এলাকার সবাই ডাকত 'ডাক্তার সায়মা'। কিন্তু সেই স্বপ্ন, সেই সম্ভাবনা আর কোনোদিন সত্যি হবে না। সোমবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় যে স্বপ্নটাই শুধু নয়, প্রাণটাই কেড়ে নিল নির্মমভাবে।
সায়মার বাবা শাহ আলম ও মা মিনারা বেগম এখন পাথরের মতো স্তব্ধ। কণ্ঠস্বর ক্ষীণ, চোখে অবিরাম জল। একমাত্র মেয়ে হারিয়ে তারা যেন দিশেহারা।
গাজীপুর মহানগরের সদর থানার অন্তর্গত বিপ্রবর্ধা গ্রামের শাহ আলম রাজধানীর উত্তরা এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন চাকরিসূত্রে। প্রাণ-আরএফএল কোম্পানির কর্মী তিনি। বড় ছেলে সাব্বির হোসেন সদ্য মাইলস্টোন স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছে। ছোট মেয়েটিই ছিল পরিবারের প্রাণ।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) সকালে বিপ্রবর্ধা গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির আঙিনায় কবর খোঁড়া হয়েছে ছোট্ট সায়মার জন্য। সকাল ১১টায় জানাজা শেষে সেখানেই দাফন করা হয় তাকে। বড় ভাই সাব্বিরের বুকফাটা কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে চারপাশের পরিবেশ। কবরের সামনে দাঁড়িয়ে বাবার চোখের পানি থামছে না।
শোকাহত গ্রামের নানা শ্রেণিপেশার মানুষ জড়ো হয়েছেন সায়মার বাড়িতে। সবার চোখ ভেজা। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না।
শোক বুকে চেপে কান্নাজড়িত কণ্ঠে বাবা শাহ আলম বলেন, 'আমার মেয়ের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার। সবার সামনে গর্ব করে বলত, আমি বড় হয়ে ডাক্তার হবো। তাই তো সবাই তাকে ডাকত 'ডাক্তার সায়মা'। কিন্তু সেই স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। দুর্ঘটনা আমার মেয়ের স্বপ্নই নয়, জীবনটাই কেড়ে নিল।'
বড় ভাই সাব্বির বলেন, 'আমার এক বন্ধু ফোন করে জানায় স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে। তারপর সারারাত খুঁজেও পাইনি। রাত আটটার পর জানতে পারি সিএমএইচে মরদেহ আছে। গিয়ে কানের দুল আর বেনী দেখে সায়মাকে শনাক্ত করি। পরে রাত দেড়টায় অ্যাম্বুলেন্সে করে তার মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসি।'
মা মিনারা বেগম বলেন, 'প্রতিদিন মেয়েকে আমি স্কুলে নিয়ে যেতাম। গতকাল আমার ভাই নিয়ে যায়। পরে ফেসবুকে দেখি দুর্ঘটনার খবর। আমার মা স্কুলে যাওয়ার আগে শুধু বলল, ''মা, স্কুলে গেলাম, টা টা।'' তারপর আর কথা হয়নি মেয়ের সঙ্গে…'
সোমবারের বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়ে হাসপাতালে আছেন আরও অন্তত ৭৮ জন। কিন্তু এই মৃত্যু সংখ্যার পরিসংখ্যানের বাইরে যে একটা ছোট মেয়ে, একটা পরিবারের স্বপ্ন, একটা গ্রামের ভালোবাসা- সব কিছু শেষ হয়ে গেল এক মুহূর্তে।
সায়মা আর নেই, কিন্তু তার অপূর্ণ স্বপ্ন, 'ডাক্তার সায়মা' হয়ে ওঠার আকাঙ্ক্ষা—এখন শুধুই কান্না জাগায় অসংখ্য মানুষের চোখে।