জাতীয় শোকের মুহূর্তে এইচএসসি পরীক্ষার সময়সূচি পেছাতে দেরি কেন?

মাইলস্টোন প্লেন দুর্ঘটনায় সারাদেশে যখন শোকের ছায়া, তখন এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা পেছানো নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেরিতে সিদ্ধান্ত নেওয়াকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ও প্রতিবাদের ঝড় ওঠে।
২১ জুলাই রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে। হতাহতদের অধিকাংশই শিশু। এ দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে গতকাল (২২ জুলাই) পরীক্ষার সময়সূচি স্থগিত করা হবে কি না, তা নিয়ে সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র উদ্বেগ তৈরি হয়।
এ অবস্থায় শিক্ষা উপদেষ্টার দপ্তরের সিদ্ধান্ত নিতে দেরির কারণ জানতে চাইলে স্থানীয় সরকারবিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজিব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্রে জানা যায়, মূলত অভ্যন্তরীণ মতবিরোধ ও প্রশাসনিক অস্থিরতাই এ সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হওয়ার পেছনে দায়ী।
সূত্র জানায়, সোমবার সন্ধ্যায় উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারকে পরীক্ষা পেছানোর প্রস্তাব দেন। কিন্তু তিনি সাড়া না দিয়ে জানান, পরীক্ষা যথাসময়েই চলবে। কিছুক্ষণ পর শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কথা জানালে তিনি বলেন, মাইলস্টোন কলেজ কর্তৃপক্ষও চায় পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হোক।
পরবর্তীতে তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম রাতেই শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
এদিকে সারাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়তে থাকে। নটর ডেম কলেজের পরীক্ষার্থীরা পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দেয়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরার, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করতে থাকেন অনেকে।
শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ না করতে পেরে রাতে সরাসরি তার বাসায় যান তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
সেখানে গিয়ে জানা যায়, পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্তে প্রধান বাধা ছিলেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। তিনিই পরীক্ষা পেছানোর বিপক্ষে মত দিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টাকে সিদ্ধান্ত নিতে নিরুৎসাহিত করেন।
অবশেষে রাত ৩টার দিকে নিজের ফেসবুক পেজে মাহফুজ আলম লেখেন, 'শিক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আজকের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।'
তবে এত দেরিতে সিদ্ধান্ত আসায় শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ আরও বাড়ে। গতকাল ঢাকাসহ সিলেট, বরিশাল, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করেন। তারা শিক্ষা উপদেষ্টা ও সচিবের পদত্যাগ দাবি করেন।
চাপের মুখে গতকাল দুপুরে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে তার পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল আবরারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।