বোনের বাড়িতে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাইলস্টোনের আরেক শিক্ষিকা মাসুকা বেগম

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বিকেলে শেষবারের মতো আগুনে পোড়া নিথর দেহে যখন বোনের বাড়ি আসেন মাসুকা, তখন দৌড়ে প্রিয় সন্তানের মরদেহের কাছে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরী।
বিমান দুর্ঘটনা তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন স্বজন ও স্থানীয়রা।
গত সোমবার (২১ জুলাই) ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শিক্ষিকা মাসুকা বেগম (৩৮) নিহত হন।
মাসুকা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার চিলোকূট গ্রামের সিদ্দিক আহমেদ চৌধুরীর মেয়ে। আজ মঙ্গলবার (২২ জুলাই) বাদ আসর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার সোহাগপুর গ্রামে জানাজার নামাজ শেষে স্থানীয় একটি কবরস্থানে মাসুকাকে দাফন করা হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট মাসুকা বেগম। ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে অনার্স শেষ করে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন ঢাকার ইডেন কলেজ থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই শিক্ষকতা পেশার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয় তার। বছর দুয়েক আগে যোগ দেন মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে। প্রতিষ্ঠানটির প্রাথমিক শাখার ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক ছিলেন তিনি।
স্বজনরা জানান, দুর্ঘটনার কিছু সময় আগে স্কুল ছুটি হয়। বিমান বাহিনীর যুদ্ধ বিমানটি যখন মাইলস্টোন স্কুলের ভবনে আছড়ে পড়ে, তখন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শ্রেণিকক্ষেই ছিলেন মাসুকা। শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হওয়ার সময় আগুন ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থীদের বাঁচাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। এরপর রাতে জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় মাসুকার।
মাসুকার ভগ্নিপতি খলিলুর রহমান বলেন, 'আমরা মাসুকার সহকর্মীদের কাছ থেকে তার মৃত্যুর খবর পাই। সে চাইলেই নিরাপদে বের হতে পারতো। কিন্তু শিক্ষার্থীদের জীবন বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছে। মৃত্যুর আগে সহকর্মীদের বলে গিয়েছিল যেন তার বোনের বাড়িতে মরদেহ পৌঁছে দেন। তার ইচ্ছাতেই আমাদের বাড়ির পাশে কবরস্থানে তাকে দাফন করেছি।'
এদিকে, বাদ আসর সোহাগপুর ঈদগাহ মাঠে মাসুকার মরদেহের জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয়। এতে স্বজন, সহপাঠী, স্থানীয় বাসিন্দা ও রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন। পরে ঈদগাহ মাঠ সংলগ্ন সোহাগপুর কবরস্থানে মাসুকার মরদেহ দাফন করা হয়।