বাংলাদেশ–যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দফার শেষ দিনে; ইতিবাচক ফলাফলের আশায় ব্যবসায়ীরা

ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত শুল্ক কমাতে বাণিজ্য চুক্তি সইয়ের জন্য দ্বিতীয় দফা আলোচনার শেষ দিনে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার (১১ জুলাই) রাত ৯টায় বৈঠকে বসেছে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদল।
এতদিন দেশটির কর্মকর্তা পর্যায়ে আলোচনার পর আজ যুক্তরাষ্ট্রের মন্ত্রী পদমর্যাদার ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) রাষ্ট্রদূত জেমিসন গ্রিয়ারের সঙ্গে আলোচনা করছে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল।
কর্মকর্তা পর্যায়ে আগের আলোচনা যেসব ইস্যুতে অচলাবস্থায় পৌঁছেছিল, সেগুলোর সমাধান হতে পারে এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে—এমনটাই আশা করছেন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের সঙ্গে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা সাক্ষাত করে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফাওজুল কবির খান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে (টিবিএস)- বলেন, 'প্রায় সব চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্টরা আমার সঙ্গে মিটিং করতে এসেছিলন। তারা ইউএস ট্যারিফ নেগোসিয়েশনের ফলাফল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন।'
উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমি তাদের বলেছি যে তিন দিনব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে, যা শুক্রবার পর্যন্ত চলবে। এখন পর্যন্ত আলোচনার ফলাফল বেশ ভালো, ব্যবসায়ীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কিছু নেই।'
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ)- প্রেসিডেন্ট মাহমুদ হাসান বাবু টিবিএসকে বলেন, 'যেসব ইস্যুর সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সম্পৃক্ততা আছে, সেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার যাতে ব্যবসায়ীদের আস্থায় নিয়ে তাদের কাছ থেকে ইনপুট নেয়, সে অনুরোধ করেছি আমরা।'
তিনি বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ নিয়ে আলোচনার বিষয়ে আমাদের পুরোপুরি অন্ধকারে রাখা হয়েছে। ট্যারিফ আলোচনায় অগ্রগতি সম্পর্কে উপদেষ্টার কাছে আমরা জানতে চেয়েছি।'
বিজিএমইএ প্রেসিডেন্ট বলেন, 'তিনি [বাণিজ্য উপদেষ্টা] আশার কথা জানিয়ে বলেছেন যে প্রথমদিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশের ওপর আরোপিত ট্যারিফ কমে যাবে।'
তিনি বলেন, 'আমরা চাই বাংলাদেশের ট্যারিফ যেন ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে কম বা সমান হয়। প্রতিযোগী এসব দেশের চেয়ে যাতে বেশি না হয়।'
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তার সঙ্গে ওয়াশিংটনে আছেন বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ড. নাজনীন কাউসার চৌধুরী।
ঢাকায় থেকে অনলাইনে যুক্ত আছেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এবং প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব।
বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলবে বলে জানা গেছে।
শুক্রবার রাতে ওয়াশিংটনে আলোচনা শুরুর আগে টিবিএস শুল্ক আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাইলে কোনো মন্তব্য করতে রাজী হননি বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তবে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে ফেসবুক স্ট্যাটাসে দিয়ে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান লিখেছেন, 'সহকর্মী বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের সাথে কথা হয়েছে। তিন দিনব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ বাণিজ্য আলোচনার প্রথম দিন আজ অতিবাহিত হয়েছে। আগামীকাল ও পরশু আলোচনা চলবে।'
তিনি আরও লেখেন, 'প্রথম দিনের আলোচনার পরিধি ছিল ব্যাপক। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কৃষি, বাণিজ্য, জ্বালানি, মেধাস্বত্বসহ সকল সেক্টরের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আমাদের প্রতিনিধিদল তাদের সমস্ত প্রশ্নের ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং তাদের বক্তব্য শুনেছেন।'
তিনি লিখেছেন, 'আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রীর সাথে আমাদের বাণিজ্য উপদেষ্টার বৈঠক হবে। এখন আমাদের আলোচনার পরিসমাপ্তি পর্যন্ত ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে হবে।'
প্রথম দিনের আলোচনা শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, 'আলোচনার পরিধি ছিল বিস্তৃত। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্কের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ দিক নিয়েই আলোচনা করা হয়েছে।'
এছাড়া ওয়াশিংটনে নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রেস মিনিস্টার গোলাম মোর্তজা এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, 'প্রথম দিনের মিটিংয়ে বেশিরভাগ শর্তেই দুইপক্ষ একমত হয়েছে।'
তবে ঢাকায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যেসব কর্মকর্তা অফিস করছেন, তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে কিছু্ জানেন না বলে জানিয়েছেন।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা টিবিএসকে বলেন, 'গত এপ্রিল থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মিটিং শেষে সম্ভাব্য যেসব আউটকাম ঢাকা অনুমান করেছিল, ৩৫% রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করে ট্রাম্প প্রশাসনের ইস্যু করা চিঠির পর দেখা গেছে অনুমানগুলো সত্যের কাছাকাছিও ছিল না।'
তিনি বলেন, 'তাই চলমান আলোচনা শেষে কী ফলাফল পাওয়া যাবে, তা জানার জন্য আলোচনা শেষ হওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রের কাছ স্টেটমেন্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চান মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।'
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নিয়ে কোনো অগ্রগতি আছে কি না জানতে চাইলে শুক্রবার রাতে জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান টিবিএসকে জানান, 'গতকাল পর্যন্ত আলোচনায় ভালো অগ্রগতি হয়েছে। আজকেও মিটিং চলবে। আশা করি, ভালো কিছু হবে।'