এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনা: বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানির সুইচ বন্ধ হয়ে দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়

গত ১২ জুন ভারতের আহমেদাবাদে বিধ্বস্ত হওয়া এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭-৮ বিমানটি আকাশে ওড়ার মাত্র তিন সেকেন্ডের মধ্যে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ সরে যাওয়ায় দুটি ইঞ্জিনই শক্তি হারিয়ে ফেলে বন্ধ হয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পরই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়ে অন্তত ২৬০ জন নিহত হন। প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) শুক্রবার (১১ জুলাই) গভীর রাতে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুটি ইঞ্জিনের ফুয়েল কাটঅফ সুইচ এক সেকেন্ডের ব্যবধানে একের পর এক 'রান' (চালু) অবস্থান থেকে 'কাটঅফ' (বন্ধ) অবস্থানে চলে যায়।
দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট ৪২ সেকেন্ডে—অর্থাৎ বিমানটি মাটি ছেড়ে আকাশে ওঠার ঠিক তিন সেকেন্ড পরই এ ঘটনা ঘটে।
সুইচগুলো ভুলবশত সরে গিয়েছিল নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে সরানো হয়েছিল, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
তবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সুইচগুলো সরে যাওয়ার সময়কার ককপিট ভয়েস রেকর্ডিংয়ে শোনা যায়, একজন পাইলট অপরজনকে জিজ্ঞাসা করছেন, তিনি কেন ইঞ্জিনগুলোর জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিলেন। উত্তরে অপর পাইলট জানান, তিনি এমন কিছু করেননি। প্রশ্নটি ফার্স্ট অফিসার নাকি পাইলট ইন কমান্ড করেছিলেন, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
প্রতিবেদনে ককপিট ভয়েস রেকর্ডিংয়ের কোনো প্রতিলিপি (ট্রান্সক্রিপ্ট) দেওয়া হয়নি। এটি দুই পাইলটের মধ্যকার কথোপকথন সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা দিতে পারত।
বিমান চলাচল নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ অমিত সিং দ্য হিন্দুকে বলেন, 'যতক্ষণ না তদন্তে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে সুরক্ষিত থাকার কথা এমন একটি ফুয়েল সুইচ কীভাবে কাটঅফ অবস্থানে চলে গেল এবং ব্যর্থতার বার্তা ও বিমানের প্রতিক্রিয়ার বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হচ্ছে, ততক্ষণ পুরো সত্য অধরাই থেকে যাবে।'
প্রতিবেদন অনুসারে, পাইলট ইন কমান্ড ক্যাপ্টেন সুমিত সাবারওয়াল বিমানটি তত্ত্বাবধান করছিলেন, বিমানটি চালাচ্ছিলেন ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্দর। ক্যাপ্টেনের ৮ হাজার ২০০ ঘণ্টার উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা ছিল। অন্যদিকে ফার্স্ট অফিসারের উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা ছিল ১ হাজার ১০০ ঘণ্টা।
উড্ডয়নের ত্রিশ সেকেন্ড পর একজন পাইলট 'মে ডে, মে ডে, মে ডে' বার্তা পাঠান—যা জীবননাশের মতো জরুরি অবস্থা বোঝাতে ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক বিপদসংকেত। এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোল (এটিসি) কর্মকর্তা বিমানটি শনাক্ত করার জন্য তার কল সাইন জানতে চাইলেও কোনো উত্তর পাননি। তবে তিনি দুপুর ১টা ৩৯ মিনিটে বিমানটিকে বিমানবন্দরের সীমানার বাইরে বিধ্বস্ত হতে দেখেন।
এএআইবি বিমানের রক্ষণাবেক্ষণের রেকর্ড পরীক্ষা করে দেখেছে, ২০২৩ সালের পর থেকে এই উড়োজাহাজের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচে কোনো ত্রুটির কথা জানানো হয়নি। ওই বছরই ককপিটের কন্ট্রোল প্যানেলের নির্দিষ্ট অংশটি (থ্রটল কন্ট্রোল মডিউল) শেষবার বদলানো হয়েছিল।
ঘটনার ১০ সেকেন্ড পর, দুপুর ১টা ৩৮ মিনিট ৫২ সেকেন্ড ও ১টা ৩৮ মিনিট ৫৪ সেকেন্ডে সুইচগুলো আবার তাদের আগের 'রান'-এ ফিরে আসে।
জ্বালানি সরবরাহ ফের চালু হওয়ার পর একটি ইঞ্জিন সচল হতে শুরু করে এবং এর গতি কমা বন্ধ হয়, কিন্তু দ্বিতীয় ইঞ্জিনেরর গতি কমা থামানো যায়নি। এর ১৭ সেকেন্ড পর, দুপুর ১টা ৩৯ মিনিট ১১ সেকেন্ডে ব্ল্যাক বক্স ডেটা রেকর্ডিং বন্ধ করে দেয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানবন্দর থেকে পাওয়া সিসিটিভি ফুটেজ অনুযায়ী, আকাশে ওড়ার পরপরই বিমানটির র্যাম এয়ার টারবাইন (র্যাট) চালু হয়ে গিয়েছিল। র্যাট হলো বিমানে থাকা জরুরি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা, দুটি ইঞ্জিন বিকল হয়ে গেলে বা বিদ্যুৎ সরবরাহে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে যায়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিমানের উড্ডয়ন পথের আশেপাশে পাখির উল্লেখযোগ্য আনাগোনা ছিল না।
বিমানটি বিমানবন্দরের সীমানাপ্রাচীর পার হওয়ার আগেই উচ্চতা হারাতে শুরু করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে বিধ্বস্ত হওয়া বি-৭৮৭-৮ মডেলের বিমান বা এতে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ধরনের ইঞ্জিন-সংক্রান্ত (জিই জিইএনএক্স-১বি) কোনো পদক্ষেপের সুপারিশ করা হয়নি।
প্রাথমিক প্রতিবেদনে সাধারণত দুর্ঘটনার কারণ প্রকাশ করা হয় না, বরং দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত বিমানের বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করা হয়। আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী, দুর্ঘটনার ৩০ দিনের মধ্যে এ ধরনের প্রতিবেদন জমা দিতে হয়।