মার্কিন শুল্কের ২০ শতাংশ শর্তে এখনো একমত নয় দুই দেশ: বিজিএমইএ সভাপতি

বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিতীয় দফার শুল্ক আলোচনার তৃতীয় ও শেষ দিনের বৈঠক গতকাল (১১ জুলাই) ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে আরও কিছু বিষয়ে দুই দেশ একমত হলেও কয়েকটি বিষয় এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
এদিকে, শুল্ক বিষয়ে আলোচনার শেষ দিনে ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কিছু মতামত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু।
তিনি টিবিএসকে বলেন, 'গতরাতে ওয়াশিংটনে ইউনাইটেড স্টেটস ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ (ইউএসটিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যেসব শর্ত দিয়েছে, তার ৮০ শতাংশ বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। বাকি ২০ শতাংশে এখনও সমঝোতা হয়নি।'
বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, তৃতীয় ও শেষ দিনেও কয়েকটি বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে। তবে কিছু বিষয় এখনো অমীমাংসিত। দুই পক্ষ আন্তঃমন্ত্রণালয় পর্যায়ে আলোচনা চালিয়ে যাবে এবং পরবর্তী বৈঠক ভার্চুয়াল বা সরাসরি যেকোনোভাবে অনুষ্ঠিত হতে পারে। খুব শিগগিরই সেই সময়সূচি নির্ধারিত হবে।
প্রেস উইং আরও জানিয়েছে, বাণিজ্য উপদেষ্টা, সচিব এবং অতিরিক্ত সচিব আগামীকাল দেশে ফিরবেন। প্রয়োজনে তারা আবার যাবেন। আলোচনার ভিত্তিতে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ও নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই একটি ইতিবাচক ফলাফল আসবে।
প্রথম দিনের বৈঠকের পর সরকার জানিয়েছিল, অধিকাংশ বিষয়ে যুক্তিসংগত আলোচনা হয়েছে। তবে শুল্ক নিয়ে মন্তব্য করা হয়নি। দ্বিতীয় দিনের পরও বলা হয়েছিল, আরও কিছু বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে।
তবে কোন শর্তে ঐকমত্য হয়েছে বা হয়নি, সে বিষয়ে সরকার কিছু জানায়নি বলে জানিয়েছেন বিজিএমইএ সভাপতি মাহমুদ হাসান বাবু।
তিনি বলেন, 'আমাদের মিটিংয়ে রাখা হয়নি। এতদিন অন্ধকারে রাখার বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানিয়ে আসছিলাম। সে কারণে মিটিংয়ের আগে কিছু ইনপুট চাওয়া হয়েছিল। আমরা তা দিয়েছি। বৈঠক শেষে জানানো হয়েছে, ৩৫ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ রেট (পাল্টা শুল্কহার) কমিয়ে আনা হবে।'
যুক্তরাষ্ট্রের ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের শর্ত নিয়ে জানতে চাইলে মাহমুদ হাসান বাবু বলেন, 'ওভেন পোশাকে (বুননজাত পোশাক) ৪০ শতাংশ ভ্যালু এড করা সম্ভব। যদি যুক্তরাষ্ট্র ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে, তবে আমরা এই শর্ত মানতে রাজি।'
চীন থেকে আমদানি কমানো ও চীনা বিনিয়োগ কমানোর শর্ত বিষয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, 'এই শর্তগুলো সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। সরকার নন-ডিসক্লোজার চুক্তির কারণে কিছু শেয়ার করতে পারছে না।'
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক প্রেসিডেন্ট এ মতিন চৌধুরী বলেন, 'ট্যারিফ (শুল্ক) নিয়ে আলোচনার অগ্রগতি সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। তাই মন্তব্য করা সম্ভব নয়।'
ওভেন পোশাকে (বুননজাত পোশাক) ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন সম্ভব কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'ভালো মানের ওয়াশ ও ট্রিটমেন্ট করলে পোশাকের দাম বাড়ে। এতে ফেব্রিকের তুলনায় মূল্য সংযোজন বাড়ে এবং তখন ৪০% অর্জন সম্ভব। তবে সস্তা পোশাক হলে তা সম্ভব নয়।'
তিনি বলেন, 'বাংলাদেশের তৈরি পোশাক ও টেক্সটাইল খাতে চীনের উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ নেই। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র কেন উদ্বিগ্ন, তা পরিষ্কার নয়। ওভেন গার্মেন্টের ফেব্রিক চীন থেকেই আনতে হয়, কারণ সিনথেটিকসহ অনেক ফেব্রিক দেশে তৈরি হয় না।'
এ মতিন চৌধুরী বলেন, '৪০ শতাংশ ভ্যালু এডিশনের শর্ত থাকলে ডেনিম ও নিটওয়্যার রপ্তানিতে সমস্যা হবে না। তবে ওভেনে যাতে সমস্যা না হয়, সেজন্য এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ভারত যেভাবে অঞ্চলভিত্তিক প্রণোদনা দিয়ে বিভিন্ন খাত গড়ে তুলছে, বাংলাদেশকেও বড় প্রকল্পের মাধ্যমে ইনসেনটিভ দিয়ে ফেব্রিক উৎপাদনে বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হবে।'