আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন প্রধান উপদেষ্টা

জাতীয় নির্বাচনের সব প্রস্তুতি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বুধবার (৯ জুলাই) ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি সংক্রান্ত এক সভায় তিনি এ নির্দেশ দেন।
পরে সন্ধ্যায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান।
শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টা একটু আগে গুরুত্বপূর্ণ একটি মিটিং করেছেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানরা ছিলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনের দুটি সম্ভাব্য তারিখের কথা বলা হয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা বলেছিলেন এপ্রিলের প্রথমার্ধে, আবার বলা হয়েছিল সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হলে, সংস্কার হয়ে গেলে রোজার আগেই নির্বাচন হতে পারে।
শফিকুল আলম বলেন, নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে আসলে আজ প্রায় দুই ঘণ্টার মিটিংয়ে রিভিউ করা হয়েছে। আজ অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রথম নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন ঘিরে ডিসেম্বরের মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সব প্রস্তুতি নিতে বলেছেন। ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করতে বলেছেন।
তিনি বলেন, এসব প্রস্তুতির মধ্যে অনেকগুলো বিষয় আছে। যেমন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে (পুলিশ, বিজিবি, কোস্টগার্ড) ১৭ হাজার নতুন সদস্য নেওয়া হচ্ছে। তাদের নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ যেন এ সময়ের মধ্যে শেষ হয়, সে বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন। নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক পাঁয়তারা হয়। উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যাতে কঠোরভাবে আইন প্রয়োগ করে।
তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ৮ লাখের মতো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ডিউটিতে থাকবেন। এদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এ কাজটা ডিসেম্বরের মধ্যে করতে হবে।
বৈঠকে তরুণদের ভোট দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রেস সচিব বলেন, গত ৩ নির্বাচনে তরুণরা কেউ ভোট দিতে পারেনি। ১৮ থেকে থেকে ৩৩ বছর বয়সীদের জন্য পৃথক একটা ভোটার তালিকা করার বিষয়ে বলেছেন। তাদের জন্য যাতে আলাদা ভোটিং বুত রাখা হয় নির্বাচনী কেন্দ্রগুলোতে, সেটার জন্য তিনি বলেছেন।
তিনি বলেন, নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে মোতায়েন হবে, এটা একটা ইস্যু। কোথায় কোথায় মোতায়েন হবে, বর্ডার এরিয়াতে কীভাবে মোতায়েন হবে, দেশের বিভিন্ন জায়গায় ঝুঁক্তিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে মোতায়েন হবে কতজন আনসার, পুলিশ, বিজিবি বা সেনাবাহিনী থাকবে, এগুলো নিয়ে আজকের মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের বিষয়ে প্রেস সচিব বলেন, ৪৭ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র থাকবে। এর মধ্যে ১৬ হাজারের মতো ভোট কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এসব কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ইলেকশন করা যায়, সেজন্য প্রধাস উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, পুলিশের ক্যামেরা বডি রাখার জন্য এবং প্রত্যেকটা কেন্দ্র যাতে সিসিটিভির আওতায় আসে, সেই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভিগুলোয় যাতে মনিটরিংটাও ঠিকমতো হয়, সে বিষয়ে প্রশিক্ষণ নিতে বলেছেন।
তিনি আরও বলেন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ইলেকশনের সময় ডিপ্লয়েড হয় এবং জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ডিপ্লয়েড হয়। একটা মিটিং অবজারভ করা হয়েছে যে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটদের অনেক সময় প্রশিক্ষণের অভাব থাকে। তাদের কীভাবে ভালোভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে ভোটের জন্য প্রস্তুত করা যায়, সে বিষয়ে নির্দেশনা এসেছে।
প্রেস সচিব বলেন, নির্বাচনের সময় চার দিন পুলিশ বা সিকিউরিটি ফোর্সের ডেপ্লয়মেন্ট হতো। এটাকে সাত দিন করা নিয়ে কথা হয়েছে, যাতে ভোটের আগে ও পরে কোনো ধরনের সহিংসতা না হয়। নির্বাচনের আগে ডিসি, এসপি, ওসি, টিএনও এগুলোকে রদবদল করার কথা বলা হয়েছে।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মুহাম্মাদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার, অপূর্ব জাহাঙ্গীর, সিনিয়র সহকারী প্রেস সচিব ফয়েজ আহমদ।