ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা: ৩ জনের যাবজ্জীবন
নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইসিসিও-বিডি-র কো-অপারেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক ইতালির নাগরিক তাবেলা সিজার হত্যা মামলায় তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণা করেছেন আদালত।
এছাড়া অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বিএনপি নেতা এম এ কাইয়ুম ও তার ভাইসহ চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত শেখ ছামিদুল ইসলামের আদালত এই রায় ঘোষণা করেন।
যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন: রাসেল চৌধুরী ওরফে চাক্কি রাসেল, মিনহাজুল আরেফিন রাসেল ওরফে ভাগনে রাসেল ও তামজিদ আহমেদ ওরফে রুবেল ওরফে শ্যুটার রুবেল। কারাদণ্ডের পাশাপাশি তাদের ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, অনদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।
এছাড়াও এ মামলার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত না হাওয়ায় বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম. এ. কাইয়ুম ও তার ভাই এম. এ. মতিন, মোহাম্মদ শাখাওয়াত হোসেন ওরফে শরিফ ও সোহেল ওরফে ভাঙারি সোহেলকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. জহিরুল ইসলাম (কাইয়ুম) এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
বিচারক রায়ের পর্যবেক্ষণ বলেন, 'মামলার ভুক্তভোগী একজন ইতালীর নাগরিক। সে হিসেবে এটি গুরুত্বপূর্ণ মামলা। মামলায় ৭ জন আসামি ছিলেন। তাদের মধ্যে চারজন কারাগারে, ১ জন পলাতক ও ২ জন জামিনে আছেন। এ মামলায় ৭০ জনের মধ্য ৪২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। চারজন আসামি ১৬৪ ধারায় দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। কারাগারে থাকা আরেক আসামি শাখাওয়াত হোসেন শরিফের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিলো হত্যাকাণ্ডের সময় তার মোটরসাইকেল ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু ঘটনার ও পরিকল্পনার সময় তার সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি। এজন্য আদালত তাকে খালাস দিয়েছে। পলাতক আসামি সোহেলের অস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা ও হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলে না থাকায় তাকে খালাস দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দুই আসামি কাইয়ূম ও মতিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারায় তাদের খালাস প্রদান করা হলো।'
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ২০১৫ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় গুলশান ৯০ নম্বর সড়কের পশ্চিম প্রান্তে গুলশান অ্যাভিনিউ সংলগ্ন গভর্নর হাউসের দক্ষিণের দেওয়াল ঘেঁষা ফুটপাতে দুর্বৃত্তরা তাবেলা সিজারকে গুলি করে। ওই সময় স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এরপর ইসলামিক স্টেট (আইএস) দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক ওয়েবসাইটে দাবি করা হয়।
ওই হত্যাকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে নেদারল্যান্ডস-ভিত্তিক বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা আইসিসিও কো-অপারেশনের বাংলাদেশের আবাসিক প্রতিনিধি হেলেন দার বিক বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করা হয়।
২০১৬ সালের ২৮ জুন ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার এম এ কাইয়ুমসহ সাতজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) পরিদর্শক গোলাম রাব্বানী। একই বছরের ২৪ আগস্ট তৎকালীন মহানগর দায়রা জজ কামরুল হোসেন মোল্লা অভিযোগপত্র (চার্জশিট) গ্রহণ করেন। ওই বছরের ২৫ অক্টোবর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আদালত।
চার্জশিটে বলা হয়, হামলাকারীদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল একজন শ্বেতাঙ্গকে হত্যা করে দেশ-বিদেশে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেওয়া। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে এই পরিকল্পনা করা হয়। অভিযুক্ত আসামি মতিনের নির্দেশে শাখাওয়াতের মোটরসাইকেল নিয়ে মিনহাজুল, তামজিদ ও রাসেল চৌধুরী গুলশান ২-এর ৯০ নম্বর সড়কে যান। ওই সড়কের গভর্নর হাউজের সীমানাপ্রাচীরের বাইরে ফুটপাতে নিরিবিলি ও অন্ধকার জায়গায় তামজিদ গুলি করে তাবেলা সিজারকে (৫১) হত্যা করেন। তাকে সহায়তা করেন রাসেল চৌধুরী ও মিনহাজুল।
মামলায় তামজিদ, রাসেল চৌধুরী, মিনহাজুল ও শাখাওয়াত আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধি আইনের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
৭০ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে এই মামলার রায় এলো।
