ঝালকাঠিতে তালগাছ কেটে বাবুই পাখি হত্যা, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি বন বিভাগের

জীববৈচিত্র থেকে ক্রমে হারিয়ে যাওয়া বাবুই পাখিরা বাসা বেধেছিল গাছটিতে। সারাক্ষণ কিচিরমিচির শব্দে আর দুলতে থাকা কারুকাজ শোভিত নীড়ের সৌন্দর্য উপভোগ করতে অনেকেই আসতেন গাছতলায়। ঝালকাঠি সদর উপজেলার পূর্ব গুয়াটন এলাকা বাবুই পাখিদের বাসার জন্য ছিল বেশ পরিচিত। তবে সবকিছু শেষ হয়ে গেছে গাছটি কেটে ফেলায়।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিকেলে মোবারেক আলী ফকিরের মালিকানাধীন জমির পার্শ্ববর্তী সড়কের থাকা গাছটি কেটে ফেলেন মিজানুর রহমান নামে গাছের পাইকার। তারা শুধু গাছটিই কেটে ক্ষান্ত হননি। বাবুই পাখির শতাধিক ডিম, অর্ধশতাধিক বাচ্চা মেরে ফেলা হয়েছে। এর মাধ্যমে ধ্বংস হয়ে গেছে ওই এলাকার বাবুই পাখিদের নিরাপদ প্রজনন কেন্দ্র ও একমাত্র আশ্রয়স্থলটিও।
জানা গেছে, মোবারেক আলী ফকির তার জমির পাশে থাকা তালগাছটি মিজানুর রহমানের কাছে বিক্রি করেন। গাছের ক্রেতা শুক্রবার গাছটিকে কেটে ফেলেন। স্থানীয়রা আপত্তি জানালেও তিনি গুরুত্ব দেননি।
পূর্ব গুয়াটনের বাসিন্দা জাহিদ হোসেন বলেন, 'আমরা গাছওয়ালীকে নিষেধ করেছিলাম গাছটি না কাটতে। এই অঞ্চলে আর কোথাও বাবুই পাখির বাসা ছিল না। ফলে ওদের বাস্তুসংস্থানের কেন্দ্রই ছিল গাছটি। গাছটি কেটে ফেলার মধ্য দিয়ে অমার্জনীয় অপরাধ হয়েছে।'
আরেক বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন বলেন, 'মূল রাস্তার পাশের গাছ সরকারের হয়। মোবারেক আলী কীভাবে তা বিক্রি করলেন সেটিও খতিয়ে দেখা উচিত। এই এলাকায় বাবুই পাখির বাসা দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ আসতেন। আমরা বাধা দিয়েছিলাম গাছটি কাটতে। আমাদের মামলার ভয় দেখিয়েছে।'

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ঝালকাঠির নেটওয়ার্ক মেম্বার আল-আমিন বাকলাই বলেন, 'বাবুই পাখি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, পৃথিবীর পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের অন্যতম নিদর্শন। বাবুই পাখি পরিবেশবান্ধব ও সংরক্ষিত প্রজাতির অন্তর্ভুক্ত। তাদের আশ্রয়স্থল ভেঙে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি করা হয়েছে। আমি মনে করি এটি ফৌজদারি অপরাধ। ওই গাছের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়কেই আইনের আওতায় আনা উচিত।'
বেলা বরিশালের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট লিংকন বায়েন বলেন, বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন-২০১২ অনুযায়ী, পাখি এবং তাদের আবাসস্থল (বাসা) ধ্বংস করা একটি অপরাধ। এই অপরাধের জন্য জেল এবং জরিমানা উভয়ই হতে পারে। ঝালকাঠির ঘটনাটি দেখলাম। পরিবেশ এভাবে ধ্বংসকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে পরিবেশ বিপন্ন হবে।
ঝালকাঠি সদর থানার ওসি মো. মনিরুজ্জামান বলেন, গাছ কর্তন ও পাখির বাসা ধ্বংস করার দায়ে বন বিভাগ বাদী হয়ে আদালতে মামলা করবেন।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা ( ইউএনও) ফারহানা ইয়াসমিন বলেন, 'বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সাথে দেখছি। বাবুই পাখির বাসা ধ্বংস করে আইন লঙ্ঘন করেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।'
বন বিভাগ বরিশালের উপ বন সংরক্ষক মো. কবির হোসেন পাটোয়ারী বলেন, 'খবর পেয়ে আমরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং ঘটনার সত্যতা পাই। এ ঘটনার সাথে জড়িত দুজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। পরিবেশ আইন অনুসারে বন বিভাগ বাদী হয়ে আজ আদালতে মামলা দায়ের করা হবে।'
ঘটনাটি নিয়ে আলোচনা শুরু হলে, গাছ ক্রেতা মিজানুর রহমান এবং বিক্রেতা মোবারেক আলী আত্মগোপনে চলে যান। তাদেরকে এলাকায় পাওয়া যায়নি দেখে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।