কেন মেয়র হওয়ার শপথ আন্দোলন থেকে সরে গেলেন ইশরাক?

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রের শপথ ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলন থেকে অবশেষে সরে দাঁড়িয়েছেন বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন। দলীয় সূত্র বলছে, আন্দোলন ঘিরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, প্রশাসনিক অচলাবস্থা ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে বিএনপি হাইকমান্ড তাকে 'সেইফ এক্সিট' দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
গত ৩ জুন ঈদের আগে এক বিবৃতিতে ইশরাক হোসেন বলেছিলেন, 'ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনে কোনো বহিরাগত প্রশাসক ও কোনো উপদেষ্টা প্রবেশ করতে পারবেন না। সরকার আমাকে মেয়রের শপথ না পড়ালে ঢাকাবাসীকে সঙ্গে নিয়ে শপথ নেব।' এই ঘোষণার পর থেকেই 'আমরা ঢাকাবাসী' ব্যানারে নগর ভবনে চলতে থাকে অবস্থান কর্মসূচি।
তবে ঈদের ছুটি শেষে আন্দোলন ঘুরে দাঁড়ালেও ধীরে ধীরে তা হারাতে থাকে গতি। ইশরাকের তত্ত্বাবধানে নাগরিক সেবা চালুর ঘোষণা দিয়েও বাস্তবে সে উদ্যোগ সফল হয়নি। ফলে ২২ জুন আন্দোলনকারীরা প্রশাসক ও প্রকৌশলী দপ্তর ব্যতীত বাকি দপ্তরগুলো খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তাতেও কর্মীদের সমর্থন না পেয়ে কার্যত আন্দোলন থেকে পিছু হটেন ইশরাক।
বৃহস্পতিবার দুপুরে নগর ভবনের প্রশাসক দপ্তরের তালা খুলে দেন আন্দোলনকারীরা। দুপুর দেড়টার দিকে দীর্ঘ ৪৩ দিন পর নিজের কার্যালয়ে প্রবেশ করেন প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া। সেদিনই আন্দোলনকারীরা নিজেদের 'ইমেজ রক্ষার্থে' [ভাবমূর্তি] আন্দোলন স্থগিতের ঘোষণা দেয়।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, আন্দোলনের মধ্যে দুইটি গ্রুপ তৈরি হয়েছিল, সংঘর্ষও হয়েছে। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য কেন্দ্র থেকে আন্দোলন থামানোর নির্দেশ দেওয়া হয়।
একইসঙ্গে দলীয় সূত্র দাবি করে, শপথ ইস্যুতে ইশরাক মরিয়া হয়ে কিছু কর্মসূচিতে অংশ নেন। তার উদ্যোগে নাগরিক সেবা ব্যাহত হয়, আন্দোলনে বহিরাগতদের সম্পৃক্ত করে তা সংঘর্ষে রূপ নেয় এবং সরকারি কর্মকর্তাদের কাজেও বাধা সৃষ্টি হয়। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সবকিছু বিবেচনায় তাকে আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়াতে বলে হাইকমান্ড।
অন্যদিকে বিএনপির মিডিয়া সেল সদস্য শায়রুল কবির খান বলেন, ঢাকাবাসীর কষ্টের কথা বিবেচনা করে আমরা আন্দোলন থেকে সরে এসেছি। তবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণের দাবিতে রাজনৈতিক ও আইনগত লড়াই অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে দল রাজনৈতিক চাপ ও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।
এদিকে আন্দোলনে সক্রিয় থাকা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের বিএনপি-সমর্থিত ইউনিয়নের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রশাসক শাহজাহান মিয়াকে বৃহস্পতিবার অফিসে ফিরে স্বাগত জানান। 'আমরা ঢাকাবাসী' আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ও ইউনিয়নের সভাপতি আরিফ চৌধুরী বলেন, 'মেয়র ইশরাক হোসেনের নির্দেশে প্রশাসকের সঙ্গে আমরা কাজ করবো।' আন্দোলন প্রত্যাহারের পর এখন নগর পরিচালনায় সহযোগিতা করার কথাও জানান তিনি।
দলীয় অবস্থানের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, আয়কর অফিস বা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে যেসব ব্যক্তি বিএনপির নাম ভাঙিয়ে আন্দোলন করছে, তারা আসলে বিএনপির কেউ নয়। তারা নিজেদের স্বার্থে এসব করছে।
উল্লেখ্য, প্রশাসক শাহজাহান মিয়া নিজের কার্যালয়ে ফিরে বলেন, 'আমরা অতীতে ফিরে তাকাতে চাই না। নগরবাসীর জন্য অনেক কাজ বাকি। আমরা সে কাজই করবো।' তিনি মশক নিধন, পরিচ্ছন্নতা ও নতুন অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নকে প্রাধান্য দেওয়ার কথা জানান।
ঢাকা দক্ষিণের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. রাসেল রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত সব কর্মকর্তা ফেসবুক লাইভে কাজের তদারকিতে যুক্ত ছিলেন, যা প্রশাসক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে পর্যবেক্ষণ করেছেন।