ঈদ শেষে ফিরতি যাত্রায় স্বস্তি ফিরলেও যানজট ভোগাচ্ছে উত্তরবঙ্গের যাত্রীদের

ঈদুল আজহার ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছেন হাজারো মানুষ। অফিসের ছুটি শেষ হওয়ার আগেই ফিরতে শুক্রবার (১৩ জুন) থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে বাড়তে থাকে যাত্রীচাপ। তবে অনেক যাত্রীই, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের যাত্রীরা, দীর্ঘ যানজট ও বাড়তি ভাড়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন।
বিভিন্ন সড়ক, নৌ ও রেলপথে যাত্রীদের চাপ দেখা গেছে।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে ফেরা যাত্রীরা তুলনামূলক কম সমস্যায় পড়লেও হলেও উত্তরের যাত্রীরা দীর্ঘ সময় যানজটে আটকে ছিলেন।
বৃহস্পতিবার রাতে বরগুনা থেকে রওনা দিয়ে শুক্রবার ভোরে ঢাকায় এসে পৌছাঁন সবুজ হোসেন।
তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রাস্তায় খুব একটা যানজট ছিল না। তবে এসি বাসে ১,২০০ টাকার টিকিট ১,৫০০ টাকায় কাটতে হয়েছে। এরপরেও এবারের ঈদে বাড়ি থেকে ঢাকায় কর্মস্থলে সময়মতো ফিরতে পেরে স্বস্তি বোধ করছি।'
তবে এর ঠিক বিপরীত চিত্র উত্তরবঙ্গ থেকে ঢাকায় ফেরা যাত্রীদের। এই যেমন, ঠাকুরগাঁও থেকে রওনা দিয়ে ১৭ ঘণ্টা পর ঢাকায় পউচেন রিয়াজুল ইসলাম—যা স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময়।
রিয়াজুল টিবিএসকে বলেন, 'স্বাভাবিক সময়ে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকায় আসতে ৮-১০ ঘণ্টা লাগে, কিন্তু সেখানে প্রায় দ্বিগুণ সময় লেগেছে রাস্তায় যানজটের কারণে। প্রায় ৪ ঘণ্টা যমুনা সেতুর টোল প্লাজার আগে যানজটে আটকে ছিলাম। আবার এলেঙ্গা ও ঢাকার প্রবেশমুখ বাইপাইলেও যানজট ও গাড়ির চাপের কারণে বাসের ধীরগতি ছিল। বাসের টিকিটের দামও ১,০০০ টাকার স্থলে ১,৬০০ টাকা গুনতে হয়েছে।'
শুক্রবার রাজধানীর গাবতলী, কল্যাণপুর, মহাখালী, সায়দাবাদ বাস টার্মিনালসহ সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ও কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে যাত্রীদের চাপ দেখা যায়।
দক্ষিণাঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা লঞ্চগুলোতে যাত্রী ঠাসা দেখা যায় সদরঘাটে। ঢাকায় আসা প্রায় সব ট্রেনই যাত্রীতে ঠাসা ছিল।
তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গাবতলী, মহাখালী বাস টার্মিনালে ভিড় কমতে থাকে। সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে বরিশাল, চট্টগ্রাম, খুলনা, যশোর, ফরিদপুর থেকে ছেড়ে আসা বাসগুলোর যাত্রীর চাপ ছিল।
খুলনা থেকে বাসে আসা যাত্রী ইকরামুল হক টিবিএসকে বলেন, 'ফেরার যাত্রা বেশ স্বস্তিরই ছিল। স্বাভাবিক ভাড়ার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি দামে টিকিট কাটলেও ভোগান্তি কম হয়েছে। এবার ঈদের লম্বা ছুটির কারণে ভিড় কম হয়েছে।'
অনেকেই টিকিটের অতিরিক্ত দাম ও বাসের নিম্ন মানের নিয়ে অভিযোগ করেছেন। বরিশাল থেকে ফেরা হুযাইফা আক্তার বলেন, '৫০০ টাকার বাসের টিকিট ৮০০ টাকায় কিনতে হয়েছে। এছাড়া বাসগুলোর মানও খুব একটা ভালো না। রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। তবে ভাড়ার নৈরাজ্য কমেনি।'
মহাখালী বাস টার্মিনালের একটি সড়ক শ্রমিক কমিটির সদস্য মো. দ্বীন ইসলাম বলেন, 'এবারে ঢাকায় আসা যাত্রীদের ভোগান্তি কম। রাস্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনীর বাড়তি নিরাপত্তা রয়েছে। বাড়তি ভাড়া নেওয়ার কোনো অভিযোগ আমরা পাইনি।'
নৌপথেও যাত্রীর ভিড় দেখা গেছে। পটুয়াখালী থেকে লঞ্চে আসা হালিম মিঞা বলেন, 'লঞ্চে বেশ ভিড় ছিল, ফলে ঠিকভাবে বসার জায়গা পাইনি। পরে বাধ্য হয়ে কেবিনের সামনের খালি জায়গায় কাপড় বিছিয়ে আসতে হয়েছে। নৌযানগুলোতে নিরাপত্তার বিষয়ে একটু ঘাটতি ছিল।'
এদিকে মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া ঘাটে যানবাহনের চাপ বেশি থাকায় যাত্রীদের ১-২ ঘণ্টা যানজটে বসে থাকতে হয়েছে। তাই অনেকেই ট্রলার কিংবা অন্য নৌযানে পারাপার হয়ে বাসে চড়ে ঢাকায় ফেরেন।
বিআইডব্লিউটিএ আরিচা কার্যালয়ের টার্মিনাল সুপারভাইজার মো. শিমুল হোসেন বলেন, 'নির্বিঘ্নে যাত্রী পারাপারের জন্য দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ২০টি লঞ্চ সচল রয়েছে। এই মুহূর্তে ১৮টি লঞ্চ চললেও অতিরিক্ত চাহিদার কথা মাথায় রেখে আরও দুটি লঞ্চ পাশে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।'
পাবনা থেকে আসা অন্তরা আক্তার বলেন, 'সরাসরি বাসে কোনো টিকিট না পেয়ে আরিচা এসে নদী পার হয়ে বাসে এসেছি। তবে এপার থেকে সেলফি পরিবহনে ১৫০ টাকার ভাড়া ২০০ টাকা দিতে হয়েছে।'
সবচেয়ে তীব্র যানজট দেখা যায় উত্তরবঙ্গের রুটে। অতিরিক্ত যানবাহনের কারণে বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকেই যমুনা সেতুতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। কোথাও কোথাও ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত আটকে থাকতে হয় যাত্রীদের।
যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ জানায়, শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৮ হাজার ৫৩৯টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে, যা স্বাভাবিক দিনের তুলনায় প্রায় তিনগুণ। এ সময়ের মধ্যে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৭৯ লাখ টাকার বেশি।
এছাড়া যমুনা সেতু টোল প্লাজায় টোল আদায়ে ধীরগতির কারণেও যানজট তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ যাত্রীদের। পোশাককর্মী রেহালা বেগম বলেন, '৮ ঘন্টার রাস্তা আসতে ১৮ ঘণ্টা লেগেছে। টোল প্লাজায় টোল কাটতেই বেশি সময় নেয়, সেখানে দ্রুত হলে ভোগান্তি আরও কমত।'
যমুনা সেতু পশ্চিম থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, 'যমুনা সেতু কর্তৃপক্ষ টোল নিতে দেরি করছে। এইজন্যই পশ্চিম পাড়ে এমন যানজট দেখা গিয়েছে।'
যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবীর পাভেল বলেন, ৯টি বুথে টোল আদায় করা হচ্ছে। তবে সেতুতে কিছু যানবাহন মাঝে মাঝে বিকল হয়ে যাওয়ার কারণেও যানজট লেগে থাকে।