শাহজাদপুরে রবীন্দ্র কাছারিবাড়িতে ভাঙচুরের নিন্দা তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপির

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত কাছারিবাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ভারতের তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি। দল দুটি একে বাঙালি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ওপর হামলা বলে অভিহিত করেছে।
ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, চলতি সপ্তাহের শুরুতে সিরাজগঞ্জের ঐতিহাসিক কাছারিবাড়িতে এ ঘটনা ঘটে, যা বর্তমানে রবীন্দ্র স্মৃতি জাদুঘর নামে পরিচিত।
একটি মোটরসাইকেল পার্কিং ফি নিয়ে এক দর্শনার্থীর সঙ্গে জাদুঘরের কর্মীদের কথাকাটাকাটি থেকে এ ঘটনার সূত্রপাত। পরে দর্শনার্থীকে একটি কক্ষে আটকে রেখে মারধর করা হয়।
এ নিয়ে জনরোষ ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজিত জনতা জাদুঘরের ভেতরে ঢুকে ভাঙচুর ও হামলা চালায়। এতে সরকারি সম্পত্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কর্তৃপক্ষ জাদুঘরটি সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়।
এ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে প্রশাসন।
ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় তৃণমূল কংগ্রেস এক বিবৃতিতে জানায়, 'বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক বাড়িতে হামলার ঘটনায় আমরা গভীরভাবে ক্ষুব্ধ। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের প্রতীক এবং বিশ্বসাহিত্যের মহান প্রতিনিধি। এ ধরনের ঘটনা প্রতিটি বাঙালির আত্মপরিচয় ও গর্বের ওপর আঘাত। আমরা ভারতের কেন্দ্র সরকারকে আহ্বান জানাই যেন বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে দোষীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য দ্বিপাক্ষিক সংলাপ শুরু করুক। আমাদের আইকনগুলো মবের বলি হতে পারে না।'
ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার একে 'লজ্জাজনক' ও 'নিন্দনীয়' বলে মন্তব্য করেন।
তিনি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, ''নোবেল বিজয়ী ও বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধেয় কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পৈতৃক ভিটাও রক্ষা পেল না—বাংলাদেশে মোহাম্মদ ইউনূসের শাসনামলে সেখানে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। এটি শুধু একটি ভবনের ওপর নয়, বরং বাঙালির আত্মপরিচয়, মুক্তচিন্তার ঐতিহ্য এবং জ্ঞান-শিল্প-সংস্কৃতির ওপর সরাসরি আঘাত। প্রশ্ন উঠছে—কবিগুরু কি শুধুমাত্র হিন্দু হওয়ার কারণে আজ বাংলাদেশে 'অপরাধী'?''
পশ্চিমবঙ্গের বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এ ঘটনায় বিএনপি ও ছাত্রশিবিরকেই দায়ী করেছেন।
তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, 'বাংলাদেশের সিরাজগঞ্জে আমাদের অমূল্য কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পবিত্র উত্তরাধিকারকে অপবিত্র করা হয়েছে। এই লজ্জাজনক ও ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড এমন এক স্থানের ওপর হামলা, যা বাংলার সাংস্কৃতিক আত্মার প্রতীক এবং রবীন্দ্রনাথের বিশ্বজনীন মানবতাবাদের বার্তাবাহী।'
তিনি আরও জানান, সোমবার কলকাতায় ভারতীয় সাংস্কৃতিক সম্পর্ক পরিষদ -এ জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা অনুষ্ঠানে এ বিষয়টি তুলেছেন তিনি।
শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'চরমপন্থী শক্তিগুলো যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তখন তারা কাউকে ছাড়ে না—এমনকি বিশ্বব্যাপী শ্রদ্ধেয় রবীন্দ্রনাথকেও নয়। কাছারিবাড়িতে হামলা কেবল একটি স্থাপনার ওপর নয়, আমাদের ঐতিহ্য, পরিচয় ও মূল্যবোধের ওপর আঘাত।'