অবশেষে টেইলর সুইফটকে নিয়ে নিন্দা করার সুযোগ পেল সবাই

টেইলর সুইফটের সবচেয়ে কট্টর ভক্তেরও যেন এখন মাথায় হাত! কারণ, পপ সঙ্গীতের এই সম্রাজ্ঞীর ভক্তকূলকে একের পর এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। একদিকে অ্যালবামের নামে একের পর এক দামী সংস্করণ বের করে পকেট কাটার ধান্দা, অন্যদিকে প্রেমিক ট্র্যাভিস কেলসিকে নিয়ে লেখা একেবারেই সাদামাটা একটি গান—বিতর্কের শেষ নেই। আর তার ওপর রয়েছে সমালোচকদের ধারালো সব মন্তব্য।
এতদিন যারা প্রিয় শিল্পীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকতেন, তারাও এখন মানতে বাধ্য হচ্ছেন যে নতুন অ্যালবামটি হয়তো তেমন জমেনি। যদিও সুইফটের সব অ্যালবাম মুক্তির সঙ্গে সঙ্গেই প্রশংসায় ভাসেনি—যেমন ২০২৪ সালের 'দ্য টর্চার্ড পোয়েটস ডিপার্টমেন্ট' অ্যালবামটিও শুরুতে বেশ বাজে রিভিউ পেয়েছিল। তবে এবারের সমালোচনার ঝড় যেন সবকিছুকে ছাপিয়ে গেছে।
সমালোচকদের যা কিছু বলার ছিল
প্রভাবশালী মিউজিক রিভিউ সাইট 'পিচফোর্ক' নতুন অ্যালবাম 'দ্য লাইফ অফ এ শোগার্ল'-কে ১০-এর মধ্যে মাত্র ৫.৯ রেটিং দিয়ে লিখেছে, 'তাঁর গান এত আবেদনহীন আগে কখনও লাগেনি।' 'দ্য নিউ ইয়র্কার' পত্রিকা প্রশ্ন তুলেছে, 'সম্পদ আর খ্যাতির কারাগারে কি আটকে গেছেন সুইফট? সম্ভবত তাঁর আবেগের গণ্ডিও এখন সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে।' 'বিজনেস ইনসাইডার'-এর মতে, অ্যালবামের কিছু কাজ যেমন সেরা, তেমনি 'কিছু কাজ আবার রীতিমতো বিব্রতকর।'

'বিলবোর্ড' তো কোনো রাখঢাক না রেখেই বলে দিয়েছে, এগুলো 'গৎবাঁধা পপ ট্র্যাক, যার গঠন একই রকম এবং দৈর্ঘ্য চার মিনিটের বেশি নয়।' এমনকি 'টিন ভোগ' পাঠকদের পরামর্শ দিয়েছে, 'টেইলর সুইফটকে—শিল্পী বা ব্যক্তি হিসেবে—খুব গুরুত্ব দিয়ে না দেখলেই অ্যালবামটি বেশি উপভোগ্য মনে হবে।' 'দ্য স্ট্যান্ডার্ড' তো এক তারকা রেটিং দিয়ে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছে, 'ইনিই কি সেই শিল্পী যিনি আমাদের 'ফোকলোর' এবং 'এভারমোর'-এর মতো অনবদ্য অ্যালবাম উপহার দিয়েছিলেন?'
কেন এই বিরক্তি?
মানুষের এই অপছন্দের পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। হয়তো কেউ কেউ তাঁর আকাশছোঁয়া সাফল্য সহ্য করতে পারছেন না! কিন্তু যখন কোনো শিল্পী 'ক্যানসেলড!' (CANCELLED!) নামের একটি গান বানিয়ে তারকা হওয়ার যন্ত্রণা নিয়ে আক্ষেপ করেন, তখন তা হজম করা কঠিন হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, ভক্তদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে সুইফটের নতুন সম্পর্ক। তিনি এমন একজনের সঙ্গে জড়িয়েছেন, যিনি নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি 'ভালোভাবে পড়তেও পারেন না।' অ্যালবামের অনেক গানেই সেই প্রেমিকের ছায়া স্পষ্ট, বিশেষ করে অন্তরঙ্গ বিষয় ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে সুইফটকে বেশ হিমশিম খেতে দেখা গেছে। সাবরিনা কার্পেন্টারের মতো শিল্পীর এই যুগে এমন গান বড্ড পানসে শোনায়। যদিও আমরা নারী শিল্পীদের একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাই না, কিন্তু শার্লি এক্সসিএক্স-এর সঙ্গে যা করছেন, তাতে তো মনে হচ্ছে তিনি নিজেই এই প্রতিযোগিতায় নেমেছেন!

সপ্তাহের শেষে, অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের নিয়ে হাজির হয়েছিলেন সুইফটের অ্যালবামের প্রচারণার অংশ হিসেবে তৈরি একটি 'সিনেমা' দেখতে। যদিও 'টেইলর সুইফট: দ্য অফিসিয়াল রিলিজ পার্টি অফ এ শোগার্ল' নামের এই প্রকল্পটি প্রায় ৩৩ মিলিয়ন ডলার আয় করেছে, তবে একে 'সিনেমা' বলাটাও যেন বাড়াবাড়ি। কারণ এর বেশিরভাগ অংশই ইউটিউবের সস্তা মানের লিরিক ভিডিওর মতো, যেখানে একই ছবি বারবার দেখানো হয়েছে। 'দ্য গার্ডিয়ান' পত্রিকা একে বড় পর্দায় দেখানো একটি 'আলসেমি ভরা ব্যবসায়িক ধান্দা' বলে অভিহিত করেছে।
ভক্তরাও কি তবে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন?
টেইলর সুইফট নিঃসন্দেহে এক বিশাল বাণিজ্যিক শক্তি। তাঁর ভক্তদল, যারা 'সুইফটি' নামে পরিচিত, তারা বেশ অনুগত ভক্তই বটে। এতদিন যারা সুইফটের সামান্যতম সমালোচনায়ও ফুঁসে উঠতেন, তারাও যেন এবার কিছুটা দ্বিধায়। একসময় রিহানার 'নেভি' বা বিয়ন্সের 'বিহাইভে'র মতো ভক্তদলগুলো ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর। সুইফটিরা সাধারণত সরাসরি আক্রমণাত্মক না হলেও, অন্যের মতামতের জন্য 'চুপচাপ প্রচণ্ড হতাশ' হওয়ার দলে পড়েন। কিন্তু এবার তাদেরও ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেছে—বিশেষ করে দুই বছর আগে ম্যাটি হিলির সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক নিয়ে ভক্তরাই প্রচণ্ড বিরক্ত হয়েছিল।

সুইফটের নতুন অ্যালবামের প্রধান গান 'দ্য ফেট অফ ওফেলিয়া' যতটা না শোনা হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি সমালোচিত হচ্ছে। শেক্সপিয়রের ট্র্যাজিক চরিত্র ওফেলিয়াকে নিয়ে লেখা গানটি সুইফটের হাতে পড়ে এমন এক পপ গানে পরিণত হয়েছে, যেখানে মনে হয় ওফেলিয়ার সমস্ত দুঃখ ঘোচানোর জন্য কেবল একজন পুরুষই যথেষ্ট ছিল!
তবে শেষ হাসিটা হাসতে টেইলর সুইফট বরাবরই ওস্তাদ। কে জানে, হয়তো এখন থেকে ৪২৫ বছর পর শেক্সপিয়রের মতোই তাঁর কাজ শতাব্দীর পর শতাব্দী বেঁচে থাকবে। যেমনটা সুইফট নিজেই এখন শেক্সপিয়র সম্পর্কে বলেন: 'এটা এখনও আবেদন হারায়নি! সত্যিই এটাকে নিয়ে বাড়াবাড়ি করা হয় না!'