ছাত্ররা জানতেনই না তাদের বাড়ির নিচতলাতেই থাকেন শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন

কুষ্টিয়া শহরের কালীশংকরপুর এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনকে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। ওই এলাকার বেশিরভাগ বাড়িতে মেস ভাড়া দেওয়া হয়। সুব্রতকে যে বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই তিনতলা বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়ও মেস রয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী থাকেন।
বাড়িটির সামনে পৌরসভার একটি সাইনবোর্ড দেখা যায়, যেখানে বাড়ির মালিকের নাম লেখা মীর মহিউদ্দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মীর মহিউদ্দিন অনেক আগেই মারা গেছেন। তাসজিদ নামের এক ছাত্র মেসটি পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। তিনিও ওই মেসেই থাকতেন।
মেসের ছাত্ররা জানান, বাড়িটির নিচতলা হেলাল উদ্দিন নামের এক প্রতিবেশি প্রায় ৫ মাস আগে ভাড়া নিয়েছিলেন। হেলালের বাড়ি এই বাড়িটির পেছনেই। তিনি ১০-১৫ দিন আগে অতিথি হিসেবে পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তিকে রেখে যান। অতিথি হিসেবে থাকা ওই লোকের সঙ্গে খুব একটা দেখা হতো না তাদের। নিচতলায় কী হয় বা কারা থাকেন, তা কখনো দেখেননি তারা। তবে একজনকে দিনে দুয়েকবার শুধু খাবার খাওয়ার সময় বের হতে দেখেন।
ছাত্ররা আরও জানান, নিচতলায় যে এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ভাড়া ছিল তারা কেউই সেটি বুঝতে পারেননি।
আরও পড়ুন: আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন কুষ্টিয়া থেকে গ্রেপ্তার
মেসের শাহীন নামের এক ছাত্র বলেন, সুব্রত বাইন কখনো বেরই হতেন না। তবে দুই থেকে তিন দিন আমি মোল্লা মাসুদকে (আরেক শীর্ষ সন্ত্রাসী) মেসের নিচে লুঙ্গি-গামছা শুকাতে দিতে দেখেছি। তবে তারা ধরা পড়ার পর থেকে প্রতিবেশি হেলালের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি।
স্থানীয়রা জানান, হেলালের দেশের বাইরে যাওয়ার কথা শুনেছিলেন তারা।
ছাত্ররা জানান, আজ ভোর ৫টার কিছু সময় পর বাড়ির সামনে সেনাবাহিনীর ৫ থেকে ৬টি গাড়ি আসে। গাড়ির বহরে একটি কালো মাইক্রোবাসও ছিল। ২০ থেকে ৩০ জন সেনাসদস্য বাড়ির তালা খুলতে বলেন।

ছাত্ররা কারণ জানতে চাইলে সেনাবাহিনী জানায়, তাদের ভয়ের কারণ নেই। তারা অভিযান চালাচ্ছেন। প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বাড়ির নিচতলায় তল্লাশির পর সকাল ৮টার দিকে দুই ব্যক্তিকে ধরে নিয়ে যায় সেনাবাহিনী।
তালা খোলার পর সেনাসদস্যরা বাড়িটির দোতলা ও তিনতলায় ওঠেন। এরপর মেসের সব বাসিন্দাকে দ্বিতীয় তলার একটি ও তৃতীয় তলার একটি কক্ষে রাখেন। এক সেনা কর্মকর্তা ছাত্রদের কাছে জানতে চান, দাড়িওয়ালা কোনো ব্যক্তি এই মেসে থাকে কি না।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, প্রায় আড়াই বছর আগে ভারতের একটি জেলখানা থেকে ছাড়া পান সুব্রত বাইন। এরপর ভারতীয় কর্তৃপক্ষ গোপনে তাকে বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হাতে তুলে দেয়। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু তাকে আদালতে না পাঠিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সরাসরি গোপন বন্দিশালায় নিয়ে যায়।
অথচ এই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে ধরতে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ জারি ছিল। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তাকে ধরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল।
আরও পড়ুন: আলোচিত শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের উত্থান যেভাবে
এরপর সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদ ভারতে পালিয়ে যান। পরবর্তীকালে দুজনই গ্রেফতার হন। সুব্রত বাইন কলকাতার কারাগার থেকে ছাড়া পাওয়ার পর পালিয়ে চলে যান নেপালে। সেখানে গিয়ে আবার ধরা পড়েন। নেপালের কারাগার থেকে সুড়ঙ্গ করে পালিয়ে সুব্রত বাইন আবারও কলকাতায় আসেন। সেখানে ধরা পড়ার পর থেকে কলকাতার কারাগারেই ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ আমলে সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে ফেরত আনতে কূটনৈতিক চ্যানেলে একাধিকবার যোগাযোগ করে সরকার। এরপর দুই বছর আগে সুব্রত বাইনকে গোপনে ফেরত পাঠানো হয়।
একটি সূত্র জানায়, ৫ আগস্টের পর গোপন বন্দিশালা থেকে সুব্রত বাইন ছাড়া পেয়ে ফের চাঁদাবাজি শুরু করেন।