লন্ডনে সম্প্রতি নিষিদ্ধ ফিলিস্তিনপন্থী গোষ্ঠীর ৪১ সমর্থক গ্রেপ্তার

লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের বাইরে একটি বিক্ষোভ থেকে সাম্প্রতিক সময়ে নিষিদ্ধ ঘোষিত "প্যালেস্টাইন অ্যাকশন" গোষ্ঠীর প্রতি সমর্থন জানানোর অভিযোগে তারা ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।
যুক্তরাজ্যে ফিলিস্তিনপন্থী আন্দোলন-বিক্ষোভের সংগঠক হিসেবে কাজ করে "প্যালেস্টাইন অ্যাকশন"। এই গোষ্ঠীর কিছু সদস্য দেশটির রয়্যাল এয়ার ফোর্স ঘাঁটিতে অনুপ্রবেশ করার ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার চলতি মাসের শুরুতে সন্ত্রাসবিরোধী আইনের আওতায় "প্যালেস্টাইন অ্যাকশন"কে নিষিদ্ধ করে।
পার্লামেন্টের এই ভোটাভুটিতে প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে নিষিদ্ধ করার পক্ষে ভোট দেন বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক-ও।
শনিবার (স্থানীয় সময়) লন্ডনের মেট্রোপলিটন পুলিশ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানায়, "একটি নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রতি সমর্থন জানানোর অভিযোগে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও একজনকে সাধারণ হামলার (কমন অ্যাসল্ট) অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।"
এর আগের সপ্তাহেও লন্ডনে অনুরূপ একটি বিক্ষোভে ২৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
এছাড়া ম্যানচেস্টার শহরেও প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে হওয়া একটি বিক্ষোভে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিছু ব্যক্তিকে। কার্ডিফ ও উত্তর আয়ারল্যান্ডেও একই ধরনের বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শনিবার লন্ডনে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে, প্রায় ৫০ জন বিক্ষোভকারী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ভবনের পাশে নেলসন ম্যান্ডেলার মূর্তির কাছে সমবেত হন। তারা "আমরা গণহত্যার বিরোধী, আমরা প্যালেস্টাইন অ্যাকশনের পক্ষে" লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে সেখানে অবস্থান নেন।
এদিকে, দ্য হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দক্ষিণ আফ্রিকা কর্তৃক দায়ের করা একটি মামলায় গাজা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ শুনানি চলছে। ইসরায়েল বারবার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।
ব্রিটিশ সরকার প্যালেস্টাইন অ্যাকশনকে "সন্ত্রাসী সংগঠন" হিসেবে তালিকাভুক্ত করায়, এটি এখন হামাস, আল-কায়েদা এবং আইএসআইএস-এর মতোই আইনিভাবে নিষিদ্ধ। এখন সংগঠনটির সদস্যপদ গ্রহণের জন্য সর্বোচ্চ ১৪ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
তবে অনেকেই এই নিষেধাজ্ঞার সমালোচনা করছেন। তাঁদের মতে, একটি অসহযোগ ও নাগরিক অবাধ্যতাভিত্তিক আন্দোলনের ওপর সন্ত্রাসবিরোধী আইন প্রয়োগ অনুচিত।
"প্যালেস্টাইন অ্যাকশন" মূলত যুক্তরাজ্যে ইসরায়েলি বা ইসরায়েল-সম্পৃক্ত ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি পদক্ষেপনিয়ে থাকে—বিশেষ করে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এলবিট সিস্টেমস – রয়েছে তাদের নিশানায়। তারা প্রায়ই এলবিট সিস্টেমস এর যুক্তরাজ্য অফিসের প্রবেশপথ অবরোধ করে, লাল রঙ স্প্রে করে, বা যন্ত্রপাতি ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আদালতেরঅ শরণাপন্ন হয়েছিল সংগঠনটি। কিন্তু, আদালত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেননি। আদালতে সংগঠনটির পক্ষের আইনজীবী দাবি করেন—এই প্রথম ব্রিটিশ সরকার এমন কোনো গ্রুপকে নিষিদ্ধ করল, যারা সরাসরি কর্মসূচির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানাত।