বাড্ডায় বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মামলা দায়ের

রাজধানীর বাড্ডায় গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কামরুল আহসান সাধনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
রোববার রাত সাড়ে ১০টার দিকে মধ্য বাড্ডার গুদরাঘাট এলাকার ৪ নম্বর গলিতে স্থানীয় একটি চায়ের দোকানের বাইরে বসে থাকাকালীন অজ্ঞাতনামা হামলাকারীরা কামরুল আহসানকে গুলি করে হত্যা করে।
সাধন তার স্ত্রীকে নিয়ে স্থানীয় বিএনপি নেতা ও সাবেক কমিশনারের মালিকানাধীন একটি ভবনের তৃতীয় তলায় থাকতেন। ফোন পেয়ে বাড়ি থেকে বের হবার পরই তাকে গুলি করা হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, মাস্ক পরা দুইজন ব্যক্তি তার কাছে এসে গুলি চালিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীদের মুখ ঢাকা ছিল এবং তারা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায়।
"তিনি সাধারণত রাত ১১/১২ টার মধ্যে বাসায় ফিরতেন। মাঝে মাঝে রাত করে ফিরতেন। রোববার তিনি বাসায় ফেরেন রাত পৌনে ১০ টার দিকে, তখন আমি নামাজ পড়ছিলাম। আমি বললাম আর তিন রাকাত নামাজ বাকি আছে, শেষ করে খাবার দিচ্ছি। এরমধ্যে তার মুঠোফোনে একটা কল আসে। ওই কলে কথা বলতে বলতে তিনি দরজা বাইরে থেকে লক করে বেরিয়ে যান। আমি নামাজ শেষে খাবারও টেবিলে সাজাই। কিন্তু সেই খাবার আর কারোরই খাওয়া হয়নি। তার আগেই গুলির খবর আসে," কথাগুলো বলছিলেন কামরুল আহসান সাধনের স্ত্রী দিলরুবা আক্তার।
কামরুল আহসান সঙ্গে দিলরুবা আক্তারের ২৪ বছরের সংসার। তাদের কোনো সন্তান নেই। কান্নাজড়িত কণ্ঠে দিলরুবা আক্তার বলেন, "আমাদের কোনো সন্তান নেই ঠিকই, কিন্তু কখনোই নিজেদের মধ্যে সম্পর্কে টানাপোড়েন আসেনি। মহল্লায় বড় হওয়া কারো সাথে ওনার বিরোধ ছিলনা। ব্যবসায়িক বা রাজনৈতিক কারণেও কারো সাথে কোনো বিরোধ বা দ্বন্দ্ব ছিল বলে কখনো শুনিও নাই।"
"এমন একটা লোককে কেউ হত্যা করতে পারে! তারা কেমন পাষণ্ড? এখন আমি কী নিয়ে বাঁচবো?" বললেন দিলরুবা।
সাধনকে লক্ষ্য করে দুই যুবকের এলোপাথাড়ি গুলির ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। সিটিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, রাস্তায় 'কফি শপ' নামে একটি দোকানের বাইরে প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে কয়েকজনের সঙ্গে গল্প করছিলেন কামরুল আহসান। রাত ১০টা থেকে ১০টা ১০ মিনিটের মধ্যে দুজন হেঁটে এসে পিস্তল দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি করে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এতে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন কামরুল। হত্যাকাণ্ডের সময় ঘটনাস্থলের আশপাশে অনেকের উপস্থিতি থাকলে হত্যাকারীদের আটকাতে কাউকেই এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
ঘটনাস্থলের ঠিক উল্টো পাশের চায়ের দোকানদার হানিফ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী। তিনি বলেন, "সাধন ভাই মাঝে মাঝে এখানে এসে বসেন। চা খান, গল্প করেন, চলে যান। গতকাল দোকানে বেশ কয়েকজন কাস্টমার ছিল, কথা বলছিলাম, চা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ গুলির শব্দ এরপর লোকজনের ছুটোছুটি। কিছু বুঝে ওঠার আগে আমিও দোকান থেকে বাইরে বের হই। দোকানের অর্ধেক সাটার নামিয়ে দৌড় দেই। কয়েক মিনিট পর ফিরে এসে দেখি ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছেন সাধন ভাই।"
কী বলছে পুলিশ
সোমবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম এন্ড অপস) এস এন মো. নজরুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, "এটা কোনো ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে গুলির ঘটনা নয়। ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণের পর আমাদের স্পষ্ট মনে হয়েছে, এটা টার্গেটেড কিলিং। কারণ টার্গেট করে শুধু সাধনকেই গুলি করা হয়েছে।"
তিনি বলেন, "প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের সঙ্গে আমরা ভিডিওটি নিয়ে কথা বলেছি। দুই শুটারকে তারা কেউ চিনতে পারছেন না। আমাদের মনে হয়েছে, হয়তো এই দুই শ্যুটার ঢাকার বাইরে থেকে কিলিং মিশনে এসেছিল।"
এদিকে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারে কাজ করছে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) একাধিক ইউনিট।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা টিবিএসকে জানান, তারা কয়েকটি বিষয়কে সামনে রেখে কাজ করছেন। ব্যবসায়ীক দ্বন্দ্ব, আধিপত্য, দলীয় কোন্দল ও পূর্ব শত্রুতার মতো বিষয়গুলো তদন্তের ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হচ্ছে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত বিএনপি নেতা সাধনের গ্রামের বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলা সদরে। রেস্টুরেন্টের ব্যবসা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করলেও ২০১৮ সাল থেকে ইন্টারনেটের ব্যবসায় নামেন সাধন৷। স্বদেশ কমিউনিকেশনস নামক ইন্টারনেট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক ছিলেন তিনি।
এদিকে, আসামিরা অজ্ঞাত উল্লেখ সোমবার সকালে বাড্ডা থানায় হত্যামামলা দায়ের করেছেন কামরুল আহসান সাধনের স্ত্রী।