আগস্টের মধ্যে ই-স্কুটার ও ই-বাইক বাজারে আনছে রাষ্ট্রায়ত্ত অ্যাটলাস বাংলাদেশ

চীনের ঝেজিয়াং লুইয়ুয়ান ইলেকট্রিক ভেহিকলের সঙ্গে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরের পর অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড চলতি বছরের আগস্টের মধ্যেই বৈদ্যুতিক যানবাহনের (ইভি) বাজারে প্রবেশ করতে যাচ্ছে। এই চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠানটি চীন থেকে যন্ত্রাংশ ও কারিগরি সহায়তা সংগ্রহ করবে।
নতুন স্বাক্ষরিত এমওইউয়ের আওতায় অ্যাটলাস বাংলাদেশ চীনের শীর্ষস্থানীয় বৈদ্যুতিক স্কুটার ও বাইক প্রস্তুতকারক ঝেজিয়াং লুইয়ুয়ানের কাছ থেকে আমদানি করে প্রাথমিকভাবে চারটি ইভি মডেল সংযোজন করবে।
আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে নিজেদের ব্র্যান্ড 'অ্যাটলাস ইভি'র নামে ইলেকট্রিক স্কুটার ও বাইক তৈরি বা সংযোজন করবে অ্যাটলাস বাংলাদেশ।
পণ্যগুলো বাজারজাত করা হবে কোম্পানির বিদ্যমান ডিলার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে। শনিবার (২৪ মে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত এক ডিসক্লোজারে এ তথ্য জানানো হয়।
এ ঘোষণার পরই অ্যাটলাসের শেয়ারের দাম ৯.৯৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি শেয়ারের মূল্য ৫৭ টাকা ৩০ পয়সায় পৌঁছায়।
অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান বলেন, 'এই অংশীদারত্ব আমাদের জন্য কৌশলগত পরিবর্তন। আগস্টের মধ্যেই আমরা আমদানিকৃত যন্ত্রাংশ দিয়ে সংযোজিত ইভি বাজারে আনব এবং ধীরে ধীরে কিছু যন্ত্রাংশ নিজস্ব কারখানাতেই উৎপাদন করব।'
তিনি আরও বলেন, 'ইতিমধ্যে চারটি ইভি মডেল বাছাই সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ইভির দাম এক লাখ থেকে দেড় লাখ টাকার মধ্যে থাকবে।'
দীর্ঘদিন লোকসানে জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান অ্যাটলাস বাংলাদেশ এখন এই বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে প্রবেশ করে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বলে জানান কোম্পানির একজন কর্মকর্তা। তিনি একে প্রতিষ্ঠানটির জন্য উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হিসেবে অভিহিত করেন।
কোম্পানির ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত চীনের ঝেজিয়াং লুইয়ুয়ান বছরে প্রায় ২১ লাখ টু-হুইলার তৈরি করে।
ডিসক্লোজার অনুসারে, ২২ মে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসইসি) সম্মেলন কক্ষে অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড ও ঝেজিয়াং লুইয়ুয়ান ইলেকট্রিক ভেহিকল কোম্পানি লিমিটেডের মধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর হয়।
বাসরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. নুরুজ্জামান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (রাষ্ট্রায়ত্ত কর্পোরেশন) এম এ কামাল বিল্লাহ, বিএসইসি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ারুল আলম, অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আজিবর রহমান, বিএসইসি ও অ্যাটলাসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
চীনা কোম্পানির আন্তর্জাতিক বিভাগের পরিচালক ড্যানিয়েল ইউ ও অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও এমওইউ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
সংকটে অ্যাটলাস, টিকে থাকার লড়াই
অ্যাটলাস বাংলাদেশের আর্থিক প্রতিবেদন বলছে, কোম্পানিটি দীর্ঘদিন ধরে আর্থিক সংকটে ভুগছে।
এই লোকসান কাটিয়ে উঠতে অ্যাটলাস বাংলাদেশ সম্প্রতি বাংলাদেশ হোন্ডা প্রাইভেট লিমিটেডের (বিএইচএল) সঙ্গে একটি চুক্তি করে, যার আওতায় সরকারি দপ্তরগুলোর চাহিদানুসারে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে হোন্ডা মোটরসাইকেল সরবরাহ করা হবে।
৩০ এপ্রিল এ-সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
গত বছরের নভেম্বরে রানার গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রানার ট্রেড পার্কের সঙ্গে যৌথভাবে ১৮ কোটি টাকা প্রাথমিক বিনিয়োগে মোটরসাইকেলের হেলমেট উৎপাদনে নামে অ্যাটলাস।
অ্যাটলাস বাংলাদেশের কারখানা প্রাঙ্গণে উৎপাদন ইউনিট স্থাপনে কোম্পানি দুটি ইতিমধ্যে এমওইউ স্বাক্ষর করেছে।
উভয় পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত একটি আলাদা বোর্ডের অধীনে এই হেলমেট উৎপাদন ইউনিট অ্যাটলাস-রানার হেলমেট প্ল্যান্ট নামে পরিচালিত হবে।
অ্যাটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড একটি টু-হুইলার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। আর ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রানার ট্রেড পার্ক বাজাজের আসল যন্ত্রাংশ ও লুব্রিক্যান্টের অনুমোদিত পরিবেশক।
ওয়েবসাইটের তথ্যানুসারে, অ্যাটলাস বাংলাদেশ ১৯৬৬ সালে হোন্ডা মোটর কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান হিসেবে যাত্রা শুরু করে।
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর প্রতিষ্ঠানটির জাতীয়করণ করে বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনের (বিএসসিসি) অধীনে আনা হয়।
১৯৮৮ সালে কোম্পানিটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয় এবং ১৯৯৩ সালে হিরো হোন্ডার সঙ্গে ব্যবসা শুরু করে।
তবে ২০১১ সালে হোন্ডা ও হিরো হোন্ডা আলাদা হয়ে যাওয়ার পর থেকেই অ্যাটলাসের অবনমন শুরু হয়।
২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠানটি টিভিএস অটো বাংলাদেশের সঙ্গে কর্পোরেট চুক্তি করে এবং ২০২০ সালের জানুয়ারিতে টিভিএস মোটরসাইকেল সংযোজনের জন্য নতুন অ্যাসেম্বলি লাইন চালু করে।
কিন্তু পণ্য বিক্রি করতে না পারায় বছরের পর বছর ধরে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে চলছে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে অ্যাটলাস ৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা লোকসান হওয়ার কথা জানায় এবং কোনো লভ্যাংশ দেবে না বলেও ঘোষণা করে।
তবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত, প্রতিষ্ঠানটির আয় আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১১৫ শতাংশ বেড়েছে বলে জানিয়েছে। তারপরও ওই সময়ে কোম্পানিটি ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা লোকসান দিয়েছে।