সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ২০ শতাংশ পর্যন্ত মহার্ঘ ভাতা, পাবেন ১ জুলাই থেকে

আগামী বাজেটে ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ১৫ শতাংশ এবং ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডভুক্ত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ২০ শতাংশ মহার্ঘ্য ভাতার ঘোষণা আসছে। আগামী ১ জুলাই থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা এ সুবিধা পাবেন। ওই তারিখ থেকেই নতুন হারে ভাতা পাবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মহার্ঘ ভাতার এই হার চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা টিবিএসকে নিশ্চিত করেছেন।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদও নিশ্চিত করেছেন, আগামী বাজেটে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এজন্য একটি কমিটি কাজ করছে বলেও জানান তিনি।
২০১৫ সাল থেকে সরকারি চাকরিজীবীরা প্রতি বছর ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক ইনক্রিমেন্ট পেয়ে আসছেন।
তবে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের জুলাই থেকে বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের পাশাপাশি অতিরিক্ত ৫ শতাংশ হারে বিশেষ প্রণোদনাও চালু করে আওয়ামী লীগ সরকার।
এই বিশেষ প্রণোদনা এখনও অব্যাহত আছে। তবে মহার্ঘ ভাতা কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকে পাওয়া ৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা সুবিধা বাতিল হয়ে যাবে।
অর্থাৎ আগামী জুলাই থেকে ৫ শতাংশ বার্ষিক ইনক্রিমেন্টের সঙ্গে মহার্ঘ ভাতা পাবেন চাকরিজীবীরা। এতে সরকারের প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয় হবে বলে জানান মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা।
হাসিনা সরকারের পতনের পর—সরকারি কর্মচারীদের ওপর ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির চাপ কমাতে—গত ডিসেম্বরে একটি কমিটি গঠিত হয়। সেখানে ১০ম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মীদের জন্য ২০ শতাংশ এবং ১ম থেকে ৯ম গ্রেডের কর্মীদের জন্য ১০ থেকে ১৫ শতাংশ মহার্ঘ ভাতা দেওয়ার প্রস্তাব আসে।
এ কমিটি একাধিকবার বৈঠক করে। তাতে জনপ্রশাসন সচিব চলতি বছরের জানুয়ারি থেকেই এটি কার্যকর করার পরামর্শ দিয়েছিলেন।
তবে অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে ভাতা দেওয়ার পরিকল্পনায় আপত্তি তোলেন সরকারের একাধিক উপদেষ্টার ঘনিষ্ঠ কিছু অর্থনীতিবিদ। তারা কেউ কেউ ব্যক্তিগতভাবে উপদেষ্টাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রস্তাবের বিরোধিতা করেন। সে সময় অর্থ উপদেষ্টা বলেছিলেন, এ বিষয়ে তখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৮২ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা, যা মোট বাজেটের ১০.৪১ শতাংশ। প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে একাধিকবার পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে—এসব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বৈষম্যের শিকার হওয়ার অভিযোগ করেছেন। আবার আগের সরকারের আমলে অবসরপ্রাপ্ত ও পদোন্নতিবঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয়েছে ৭৫ কোটি টাকা।
মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সাধারণত প্রতি বছর বেতন-ভাতা খাতে বাজেট বরাদ্দ ৬ থেকে ৮ শতাংশ বাড়ে। সেই হিসাবে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য এই বরাদ্দ প্রায় ৮৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় পৌঁছাতে পারে। তবে মহার্ঘ ভাতা যুক্ত হলে ব্যয় বেড়ে ৯৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি যেতে পারে।