নগর ভবনের ফটকে তালা; মঞ্চ বানিয়ে ইশরাক সমর্থকদের বিক্ষোভ কর্মসূচি; গুলিস্তান ও আশেপাশের এলাকায় তীব্র যানজট

বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন তার সমর্থকেরা।
'ঢাকাবাসী' ব্যানারে এই কর্মসূচি চলছে গত বুধবার থেকে। এতে নগর ভবনের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে, বন্ধ রয়েছে সব ধরনের নাগরিক সেবা।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বঙ্গবাজার থেকে গোলাপশাহ মাজার পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। গুলিস্তান মাজার মোড়েও সড়কে অবস্থান নিয়েছেন সমর্থকেরা। সেখানে তৈরি হয়েছে মঞ্চ, বৈদ্যুতিক খুঁটিতে লাগানো হয়েছে মাইক। মঞ্চ থেকে বিভিন্ন গান পরিবেশন করা হচ্ছে, দেয়া হচ্ছে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের পদত্যাগের দাবিতে স্লোগানও।
সমর্থকেরা নগর ভবনের সামনে বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে জড়ো হয়েছেন। বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের পাশাপাশি ডিএসসিসির কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও আন্দোলনে সংহতি জানাতে দেখা গেছে।
গত ২৭ এপ্রিল নির্বাচন কমিশন আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মতামত পাওয়ার পর এবং পরবর্তীতে গেজেট প্রকাশের পর ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণের নতুন মেয়র ঘোষণা করে।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের ১২টি সিটি কর্পোরেশনের সব মেয়রকে অপসারণ করা হয়।
১৭ মে এক সংবাদ সম্মেলনে ইশরাক বলেন, নির্বাচনের ৩০ দিনের মধ্যে তিনি একটি মামলা দায়ের করেছিলেন। 'ঢাকা দক্ষিণের তৎকালীন মেয়র তাপস জোর করে মামলার কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন,' বলেন তিনি।
ইশরাক আরও বলেন, 'সে সময় আদালত আওয়ামী লীগের পক্ষে ছিল। আমরা সব আইনি পদক্ষেপ অনুসরণ করে রায় পেয়েছি। যারা রায়ের বিরুদ্ধে কথা বলছেন, তারা আদালতকে অপমান করছেন।'
গেজেট প্রকাশের ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও তাকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হিসেবে শপথ গ্রহণ করানো হয়নি উল্লেখ করে ইশরাক বলেন, তিনি শপথ নিতে প্রস্তুত।
ইশরাকার সমর্থকদের অভিযোগ, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া ইচ্ছাকৃতভাবে শপথ গ্রহণে বাধা দিচ্ছেন। তাদের মতে, 'আইনগত জটিলতা', 'অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যা', 'মন্ত্রণালয়ের মতামত' ইত্যাদি দেখিয়ে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে। তারা উপদেষ্টার অপসারণসহ ইশরাকের শপথে আর বিলম্ব না করার দাবি জানাচ্ছেন।
শিহাব হোসেন নামের গেন্ডারিয়ার এক ব্যবসায়ী ইউএনবিকে বলেন, 'ষড়যন্ত্র করে নির্বাচনে হারানো হয়েছিল ইশরাককে। এতদিন পরে হলেও কোর্ট তাকে মেয়র ঘোষণা করেছে। যে কয়দিন মেয়াদ আছে, ওই কয়দিন আমরা ইশরাককে মেয়রের চেয়ারে দেখতে চাই।'
বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদও গতকাল বিকেলে সিলেট জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সদস্য সংগ্রহ ও নবায়ন কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, আজ বা কালকের মধ্যে ইশরাক হোসেনকে শপথ গ্রহণ করানো না হলে চলমান আন্দোলন ভিন্ন পথে মোড় নেবে।
এছাড়াও, আন্দোলন চলাকালীন ইশরাক হোসেন অন্তর্বর্তী সরকার সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তিকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, 'সর্বশক্তি দিয়ে এরা ঢাকায় বিএনপির মেয়র আটকানোর চেষ্টার মধ্য দিয়ে আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি ভূমিকা পালন করবে, তা ক্লিন কাট বুঝিয়ে দিল।'
একইসঙ্গে নিরপেক্ষ না থেকে যারা কোনো নির্দিষ্ট দলের হয়ে কাজ করছেন, অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ করার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির এই তরুণ নেতা।

সোমবার (১৯ মে) দুপুর তিনটার দিকে নিজের ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে ইশরাক হোসেন এ কথা জানান।
এদিকে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র হিসেবে ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশনের জারি করা গেজেট স্থগিত চেয়ে রিটের ওপর আজ মঙ্গলবার (২০ মে) শুনানির জন্য দিন ধার্য করেছেন হাইকোর্ট।
গতকাল সোমবার বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ দিন রাখেন। আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ হোসেন।
২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। তাতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস মেয়র নির্বাচিত হন। নির্বাচন কমিশন ২ ফেব্রুয়ারি ভোটের ফলের গেজেট প্রকাশ করে।
এরপর শপথ নিয়ে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তাপস। সেই নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র পদে তাপস পেয়েছিলেন সোয়া চার লাখ ভোট।
তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ইশরাক পান দুই লাখ ৩৬ হাজার ভোট। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র আন্দোলনের পর গত বছরের আগস্ট মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশের সব সিটি করপোরেশনের মেয়রদের অপসারণ করা হয়। এরপর ঢাকা দক্ষিণ সিটির প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন অতিরিক্ত সচিব শাহজাহান মিয়া।
এর মধ্যে গত ২৭ মার্চ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২০২০ সালের নির্বাচনে ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণার ফল বাতিল করে বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়র ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম।
আদালত ১০ দিনের মধ্যে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ রায় পাওয়ার পর ২৭ এপ্রিল গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন।