সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে: ইউজিসি চেয়ারম্যান

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের টানা তিন দিন ধরে বিক্ষোভ, অবস্থানসহ বিভিন্ন কর্মসূচির পর সরকার তাদের দাবি মেনে নিয়েছে। আজ শুক্রবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এস এম এ ফায়েজ আন্দোলনস্থলে উপস্থিত হয়ে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, সরকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়েছে।
এর আগে আজ সকাল থেকেই তিন দফা দাবি আদায়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা সংলগ্ন কাকরাইল মসজিদ মোড়ে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। যমুনার দিকে যাওয়ার পথে সড়কের ডান পাশে পুলিশ ব্যারিকেডের সামনে বসে তারা নিজেদের দাবির পক্ষে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
পরে তাদের দাবিগুলো নিয়ে ইউজিসি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে ইউজিসি চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে যান।
আমাদের প্রতিনিধির পাঠানো ঘটনাস্থলের সর্বশেষ পরিস্থিতি-
রাত সাড়ে ৮টা
কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা
সরকারের পক্ষ থেকে দাবি মেনে নেওয়ার পর কাকরাইল মোড়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের তিন দফা দাবিতে করা কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন। এরপর তারা সেখান থেকে চলে যান।
সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিট
বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্যা সমাধানে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রোডম্যাপ ঘোষণা করবে সরকার
এর আগে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে শিক্ষা উপদেষ্টার বরাত দিয়ে জানানো হয়, আর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান নিয়ে সরকারের স্পষ্ট রোডম্যাপ জানানো হবে।
উপদেষ্টাকে বোতল ছুড়ে মারা সেই শিক্ষার্থীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি
এদিকে মাহফুজ আলমকে লক্ষ্য করে বোতল ছুড়ে মারা শিক্ষার্থী মোহাম্মদ হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। পরে গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে ওই শিক্ষার্থী ও তার পরিবারের সাথে কথা বলেছেন তথ্য উপদেষ্টা। আন্দোলন শেষে তিনি তাকে বাসায় আসারও দাওয়াত দিয়েছেন।
এর আগে দুপুরে তথ্য উপদেষ্টা হুসাইনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অভিভাবকদের জিম্মায় হস্তান্তরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।

বিকাল সাড়ে ৫টা
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে আলোচনার আহ্বান জোনায়েদ সাকির
শিক্ষার্থীদের দাবিকে ন্যায্য উল্লেখ করে সরকারকে তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসার আহ্বান জানিয়েছেন গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি। আজ শুক্রবার (১৬ মে) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চের ৫০ বছর উপলক্ষে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
জোনায়েদ সাকি বলেন, 'উপদেষ্টাদের বলি, আপনাদের আন্দোলন ন্যায্য, আর অন্যদের আন্দোলন অন্যায্য, এটা ভালো কথা না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের ন্যায্য দাবি মানার জন্য আলোচনায় বসুন। আলোচনায় না বসে কায়দা করে দীর্ঘসূত্রিতা করে আপনারা কী পরিচয় দিচ্ছেন নিজেদের।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, 'বিচার, সংস্কার, এবং নির্বাচন এই তিন বিষয় এক সঙ্গে চালিয়ে বাংলাদেশকে একটা যথার্থ উত্তরণের পথে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব আপনার কাছে। বিচার, সংস্কার, নির্বাচন এই তিনটা একসাথে চলতে হবে। এই তিনটার সঙ্গে কোনো ধরনের বিরোধ জনগণ মানবে না। কাজেই এই তিনটাকে একসাথে চালিয়ে নিয়ে যত সমস্যা হচ্ছে, সেগুলোর দ্রুত সমাধান করে জনগণের ঐক্য ফিরিয়ে আনুন।'
বিকাল ৫টা ১৫ মিনিটি
২ ঘণ্টার মধ্যে না ছাড়লে ডিবি অফিস ঘেরাওয়ের ঘোষণা শিক্ষার্থীদের
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব সামসুল আরেফীন বলেন, একটি অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে আমাদের যৌক্তিক আন্দোলনকে ভিন্নভাবে দেখানোর চেষ্টা করছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকের ওপর হামলাকে বড় করে না দেখে ছোট বোতলকে বড় করছে। আমাদের শিক্ষার্থীকে ডিবি তুলে নিয়েছে। অথচ আমাদের ওপর হামকারীদের দেখছেন না।
তিনি বলেন, আগামী দুই ঘণ্টার মধ্যে ওই শিক্ষার্থীকে ছেড়ে না দিলে ডিবি অফিস ঘেরাও করা হবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা শৃঙ্খলায় বিশ্বাসী, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে এর আগে আমাদের ভাইয়ের গায়ে ফুলের টোকাও দেওয়া যাবে না।
বিকাল ৫টা
'কোনো শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন হলে, দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে'
দর্শন বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা তিনদিন ধরে আন্দোলন করছি। সরকার এখনো আমাদের দাবি মেনে নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে অনশন কর্মসূচি শুরু করেছি। এতে যদি আমাদের কোনো শিক্ষার্থীর জীবন বিপন্ন হয়, তবে তার দায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নিতে হবে।
বিকাল ৪টা ৪০ মিনিট
দাবি আদায়ে গণঅনশন
এদিকে দাবি আদায়ে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকেলে গণঅনশন ও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন আন্দোলনকারীরা।
এর আগে আজ সকালে ইউজিসি ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠকে শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার উপস্থিত ছিলেন। তিনি দুটি বৈঠকের বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।
বিকাল ৪টা ১৫ মিনিট
তথ্য উপদেষ্টার মাথায় বোতল ছুঁড়ে মারার ঘটনায় একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের দিকে পানির বোতল ছুড়ে মারার ঘটনায় একজনকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
আজ (১৬ মে) ডিএমপি মিডিয়া মিডিয়া উইং থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, 'তথ্য উপদেষ্টার দিকে পানির বোতল ছুঁড়ে মারার ঘটনায় একজনকে ডিবি কার্যালয়ে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে তার অভিভাবকের নিকট হস্তান্তর করা হবে।'
এর আগে যা ঘটেছে
পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ শুক্রবার (১৬ মে) সকাল ১০টায় কাকরাইল মোড়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাবেক শিক্ষার্থীদের সমাবেশ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে বাসে করে অংশগ্রহণকারীরা সেখানে আসছেন। এতে মৎস্য ভবন থেকে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
সকাল ১০টার দিকে তাদের সঙ্গে কয়েকজন শিক্ষক যোগ দেন। সোয়া ১০টার কিছু পরে শিক্ষার্থীদের একটি বাস আসে এবং সাড়ে ১০টার দিকে আরেকটি বাসে আরও শিক্ষার্থী এসে পৌঁছান।
সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় বসে 'রক্ত লাগলে রক্ত নে, জগন্নাথের হলে দে'; 'আইসা পরছি যমুনা, খালি হাতে যাবো না'; 'আমার বোনের রক্ত ঝরে, ইউনূস কি করে' ইত্যাদি স্লোগান দিচ্ছেন।
এদিকে কাকরাইলের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। বৃহস্পতিবার (১৫ মে) এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ডিএমপি-এর নিষেধাজ্ঞার মধ্যেই রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

তিন দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক সমিতি।
শিক্ষার্থীদের তিন দফা দাবি হলো— বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীর জন্য ২০২৫-২৬ অর্থবছর থেকে আবাসন বৃত্তি চালু করা, জবির প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ বাজেট কাটছাঁট না করে অনুমোদন এবং দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ একনেক সভায় পাশ ও বাস্তবায়ন।
দাবি সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পিছিয়ে যাওয়ার আর সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক রইছ উদ্দিন। আজ দুপুরে শিক্ষার্থীদের চলমান অবস্থান কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
অধ্যাপক রইছ উদ্দিন বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অবহেলিত, বঞ্চিত এটা ঐতিহাসিকভাবে সত্য। এই বৈষম্যের নিরসনের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দল-মত নির্বিশেষে সব শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী সবাই একাট্টা। সুতরাং আমাদের দাবি পূর্ণাঙ্গরূপে মানতে হবে। আমরা এমন একটি পর্যায়ে উপস্থিত হয়েছি, এখান থেকে ব্যাকে যাওয়ার সুযোগ নেই। তাই সবার সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ চাই।'

তিনি বলেন, 'আমরা এখান থেকে এক চুলও সরবো না। আমাদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত যে সরকার যদি চোখ রাঙিয়ে কথা বলে, হুমকি-ধামকি দেয়, যদি স্টিমরোলার চালানোর প্রচেষ্টা করে তাহলে সেটাকে রুখে দেবো। এ আন্দোলন তখন কাকরাইল মোড়ে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এটা কোথায় যাবে, জানি না, এর দায় দায়িত্ব আমরা নেবো না।'
তিনি আরও বলেন, 'এ দেশের প্রত্যেকটা নাগরিক তাদের অধিকার প্রত্যাশা করে। তিনদিন ধরে আমার শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে বসে দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন করছে। কিন্তু এখনো সরকারের পক্ষ থেকে কোনো সমাধান আসেনি। অথচ চাইলে প্রথম দিনই তার সমাধান করা যেত।'
রইছ উদ্দিন বলেন, 'জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় নিপীড়িত,বঞ্চিত ও নিষ্পেষিত। আমরা এমন এক স্থানে উপনীত হয়েছি, যেখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো উপায় নেই। আমাদের দাবি পূরণ না হলে এই কাকরাইল মোড় আরেকটি জনদাবি বাস্তবায়নের কেন্দ্রে পরিণত হবে। আমাদের রক্তের ওপর প্রতিষ্ঠিত সরকার যদি হুমকি-ধামকি দেয়, আমরা সেটাকে রুখে দেবো।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক নাসির আহমেদ বলেন, 'শিক্ষার্থীরা তাদের যৌক্তিক দাবি নিয়ে এখানে এসেছে। কিন্তু আমরা দেখলাম পুলিশ কীভাবে হামলা করলো। অথচ এই একই জায়গায় অন্য একটি গ্রুপকে ঠাণ্ডা পানি সরবরাহ করা হয়েছিল। আমরা সরকারকে বলবো শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিন।'

তিনি আরও বলেন, 'কয়েক মাস আগে শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ে এসেছিল। তখন সরকার বলেছে, বাজেট বরাদ্দ বাড়াবে। অথচ সেই কথাও সরকার রাখেনি।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরের প্রশাসক তারেক বিন আতিক টিবিএসকে বলেন, আজ সকাল থেকে এখন পর্যন্ত রোটেশনে প্রায় ৫৩টি বাস ক্যাম্পাস থেকে কাকরাইল মোড়ে এসেছে। আরও দুটি বাস আসার কথা রয়েছে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার প্রতিবাদে বিকেল সোয়া ৪টার পর নীরবতা পালন কর্মসূচি করেন আন্দোলনতর শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ১৪ মে-কে কালো দিবস ঘোষণা করেছেন করেছেন তারা।