জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা: বামপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠনের নেতৃবৃন্দের নিন্দা-প্রতিবাদ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়টির বামপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের সাবেক নেতৃবৃন্দ।
আজ বুধবার (১৪ মে) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বামপন্থী ও প্রগতিশীল সাবেক নেতৃবৃন্দের পক্ষে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সহসভাপতি তানভীর মাহমুদ তানিমের সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ নিন্দা জানানো হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, নতুন হল নির্মাণ, ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ এবং আবাসন সংকট নিরসনের ন্যায্য দাবিতে আজ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কার্যালয় অভিমুখে যাত্রা করেছিল। কিন্তু রাজধানীর মৎস্য ভবন এলাকায় অগণতান্ত্রিক কায়দায় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হয়।
লজ্জাজনক হলো, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হওয়া শিক্ষকরাও এই হামলা থেকে রেহাই পায়নি। আমরা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক বামপন্থী ও প্রগতিশীল সংগঠনসমূহের নেতৃত্ব এ ধরনের হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। সেইসঙ্গে চলমান আন্দোলনের প্রতি আমাদের অকুণ্ঠ সংহতি ও সমর্থন জানাচ্ছি।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে, আজ যে ন্যাক্কারজনক হামলা চালানো হয়েছে তা শুধু গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের একটি নগ্ন উদাহরণই নয়, বরং একটি দমনমূলক শাসনের চেহারাও স্পষ্ট করে তোলে।
আমরা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) সাবেক বামপন্থী ছাত্রনেতারা, ড. ইউনূস সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রশাসনের এই বর্বরোচিত হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। টিয়ারশেল ও সাউন্ড গ্রেনেড ব্যবহার করে যেভাবে শিক্ষার্থীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা ফ্যাসিবাদী অতীতকে মনে করিয়ে দেয়।
আরও বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘদিন ধরে আবাসন সংকট, হলে জায়গার অভাব ও অনিরাপদ পরিবেশে বসবাসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে আসছে। প্রশাসন বারবার আশ্বাস দিয়ে চুপ করানোর চেষ্টা করেছে, কিন্তু বাস্তব পরিবর্তনের কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। তাই শিক্ষার্থীদের এই প্রতিবাদ একেবারেই যৌক্তিক ও সময়োপযোগী।
২০১৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) বামপন্থী প্রগতিশীল সংগঠনগুলো সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ৩৬ দিনব্যাপী আন্দোলন পরিচালনা করে। তারই ফল হিসেবে কেরানিগঞ্জে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ২০০ একর জমি বরাদ্দ করা হয়। ফ্যাসিবাদী শাসককে বাধ্য করে শিক্ষার্থীরা সেই দাবি আদায় করে। কিন্তু আজ ৯ বছর পরও সেই প্রকল্পের আশু বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বাংলাদেশের সবচেয়ে বঞ্চিত শিক্ষাঙ্গনের একটি। সুতরাং এ ক্যাম্পাসের দাবি বাস্তবায়নে সরকারের উদ্যোগী হয়ে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা না করে এ ধরনের হামলা লজ্জাজনক। অন্তর্বর্তী সরকারকে এর জবাব দিতে হবে। আমরা সাবেক ছাত্রনেতারা মনে করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উচিত এই হামলার বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ আওয়াজ তোলা। রাষ্ট্রকে অবিলম্বে এই হামলার দায় স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করতে হবে এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও ন্যায্য দাবির বাস্তবায়নের পথ খুলে দিতে হবে। ছাত্র আন্দোলন দমন নয়, বরং তাকে স্বাগত জানানো উচিত। কারণ এই আন্দোলনই আগামী দিনের গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ নির্মাণের শক্ত ভিত গড়ে তোলে।
নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন যারা-
মাসুদ রানা, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; ফারুক আহমেদ আবির, সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; লাকী আক্তার, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; জাহিদুল ইসলাম সজীব, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; মেহেরাব আজাদ, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জবি শাখা; কিশোর কুমার সরকার, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; মো. তুষার বেপারী, সাবেক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; রুহুল আমিন, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; প্রসেনজিৎ সরকার, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জবি শাখা; তানভীর মাহমুদ তানিম, সাবেক সহসভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; মুজাহিদ অনীক, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; এস কে শুভ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; অনিমেষ রায়, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জবি শাখা; সমিত ভৌমিক, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; কামিল মুত্তাকী, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; মিফতাহ আল এহসান তূর্য, সাবেক সভাপতি, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, জবি সংসদ; মোনায়েম হোসেন, সাবেক সভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জবি শাখা; তানজিম সাকিব, সাবেক সাধারণ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; সুমাইয়া সোমা, সাবেক সহসভাপতি, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা; নাজমুন্নাহার আঁখি, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, জবি শাখা এবং রাকিব হাসান, সাবেক অর্থ সম্পাদক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, জবি শাখা।