সাংবাদিক আরিফকে তুলে নিয়ে নির্যাতন: সাবেক ডিসি সুলতানা ও ৩ ম্যাজিস্ট্রেটের বিরুদ্ধে চার্জশিট

কুড়িগ্রামের সাংবাদিক মো. আরিফুল ইসলাম রিগানকে মধ্যরাতে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নামে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনায় সাবেক জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনসহ তিন সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিকেলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই রংপুরের পরিদর্শক রায়হানুল রাজ দুলাল কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ চার্জশিট জমা দেন।
চার্জশিটে অভিযুক্তরা হলেন—সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন, সাবেক আরডিসি নাজিম উদ্দিন, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমা এবং এসএম রাহাতুল ইসলাম। দণ্ডবিধির ৯টি ধারায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলাম রিগান বলেন, 'দীর্ঘ পাঁচ বছরেরও বেশি সময় পর চার্জশিট জমা হলো। আসামিরা সবাই প্রভাবশালী। বিভাগীয় মামলায় তাদের সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ হলেও তারা চাকরিতে বহাল ছিলেন। তারা বিভিন্ন সময় মামলার তদন্তকাজে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করেছেন। এরপরও চার্জশিট দাখিল করায় তদন্ত সংস্থা পিবিআইকে ধন্যবাদ। আশা করি আদালতে ন্যায়বিচার পাব।'
রিগানের পক্ষে রিটকারী আইনজীবী ইশরাত হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, 'বিভাগীয় তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও অভিযুক্তরা প্রশাসনে বহাল ছিলেন। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়া শুধু বিচার ব্যবস্থাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে না, প্রশাসনের ভেতরে প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্রও তুলে ধরে। আমি আইনজীবী হিসেবে প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রত্যাশা করি।'
কোর্ট ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলাম জুয়েল বলেন, 'আমরা চার্জশিট হাতে পেয়েছি। পরবর্তী ধার্য তারিখে আদালতে নথি উপস্থাপন করা হবে।'
ঘটনার পেছনের প্রেক্ষাপটে জানা যায়, কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসনের একটি পুকুরের নামকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ১৩ মার্চ মধ্যরাতে সাংবাদিক আরিফকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে 'ক্রসফায়ার'-এর ভয় দেখিয়ে ধরলা ব্রিজের পাড়ে নেওয়ার পর আবার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এনে বিবস্ত্র করে নির্যাতন চালানো হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
ওই সময়ের আরডিসি নাজিম উদ্দিন, এনডিসি রাহাতুল ইসলাম এবং ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমাসহ জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা এ ঘটনায় জড়িত ছিলেন।
তাকে মোবাইল কোর্টে সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলেও বাড়িতে কোনো তল্লাশি না চালিয়েই তার বিরুদ্ধে মাদক রাখার অভিযোগ আনা হয়। এই ঘটনা দেশজুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পরপরই মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশে ঘটনাস্থলে যান রংপুরের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব)। তার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।
পরবর্তীতে পরিবারের কোনো আবেদন ছাড়াই ১৫ মার্চ আরিফের জামিনের ব্যবস্থা করে জেলা প্রশাসন। কারামুক্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় তিনি সদর থানায় লিখিত অভিযোগ দেন।
পরবর্তীতে হাইকোর্টের নির্দেশে ৩১ মার্চ মামলা রেকর্ড করে পুলিশ এবং আরিফকে দেওয়া সাজাও স্থগিত করে উচ্চ আদালত।