সবার জন্য বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বিমা চালুর সুপারিশ স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের

বাধ্যতামূলক সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা চালু এবং সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে অন্তর্ভুক্ত করে ব্যয়বহুল চিকিৎসায় আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেওয়া স্বাস্থ্যখাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করা হয়।
এর আগে আজ সোমবার (৫ মে) সকাল ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার কাছে কমিশনের সদস্যরা এ প্রতিবেদন জমা দেন। পরে ঢাকার বাংলাদেশ ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনে উল্লিখিত সুপারিশগুলোর কথা তুলে ধরেন কমিশনের সদস্যরা।
বাধ্যতামূলক স্বাস্থ্য বিমার বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে বাধ্যতামূলক সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা (সোশ্যাল হেলথ ইনস্যুরেন্স বা এসএইচআই) চালু করতে হবে। এ বিমার মাধ্যমে ক্যান্সার, কিডনি বিকল, জটিল অস্ত্রোপচার এবং অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদি রোগের (যা বিপর্যয়কর চিকিৎসা ব্যয়ের ঝুঁকি তৈরি করে) চিকিৎসায় আর্থিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে।
আরও বলা হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে সরকারি ও বেসরকারি পেশাজীবীদের বাধ্যতামূলকভাবে এই বিমায় অন্তর্ভুক্ত করা এবং নিয়োগকর্তা ও কর্মচারীর যৌথ প্রিমিয়ামের ভিত্তিতে বিমা পরিচালনা করা। একইসঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে ভর্তুকি দিয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে এ বিমার আওতায় আনা। পরবর্তী পর্যায়ে টার্গেটেড ভর্তুকি ও আংশিক অর্থ প্রদানের মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করা।
জার্মানি, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম বাধ্যতামূলক প্রিমিয়াম, ভর্তুকি ও বহুমাত্রিক তহবিল একীভূত করে সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা কার্যকর করেছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, রুয়ান্ডা প্রাতিষ্ঠানিক খাতে এই বিমা চালুর পাশাপাশি কমিউনিটিভিত্তিক বিমার মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করেছে। এসব অভিজ্ঞতা এটাই স্পষ্ট করে যে সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা ধাপে ধাপে চালু করা সম্ভব, এমনকি স্বল্প সম্পদের দেশেও।
আরও বলা হয়, বাংলাদেশে সামাজিক স্বাস্থ্য বিমা চালুর মাধ্যমে উচ্চ ব্যয়ের চিকিৎসা সেবায় প্রবেশাধিকার বাড়বে, ব্যয়জনিত দারিদ্র্য হ্রাস পাবে এবং স্বাস্থ্যখাতে পূর্বানুমেয়, সমন্বিত ও স্থিতিশীল অর্থায়নের ভিত্তি তৈরি হবে। এটি সর্বজনীন স্বাস্থ্য সুরক্ষা অর্জনের পথকে আরও স্পষ্ট, শক্তিশালী ও টেকসই করে তুলবে।