সরকারি চাকরির ১০-১২তম গ্রেডের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক হচ্ছে

সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া সহজ করতে, বিলম্ব ও প্রশাসনিক ব্যয় কমাতে এবং যথাসময়ে শূন্য পদ পূরণ করতে ১০-১২তম গ্রেডের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা রাখা বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে সরকার।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, প্রতিটি পদের বিপরীতে দুইজন করে প্রার্থীকে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হবে। মূল তালিকা থেকে কেউ চাকরিতে যোগ না দিলে বা যোগ দেওয়ার পর কেউ চাকরি ছাড়লে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে ওই পদ পূরণ করা হবে। অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ থাকবে এক বছর।
মন্ত্রণালয়, বিভাগ এবং এসবের অধীন দপ্তর, পরিদপ্তর, অধিদপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা এবং বিভিন্ন করপোরেশনের ১০-১২তম গ্রেডের সব ধরনের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা বাধ্যতামূলক করে পরিপত্র জারি করতে যাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্ত্রণালয়ের বিধি অনুবিভাগ এই পরিপত্রের খসড়া তৈরি করে অনুমোদনের জন্য তা প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠিয়েছে। তার সম্মতি পাওয়ার পর পরিপত্র জারি করা হবে।
এর সরকারি চাকরির ১৩-২০তম গ্রেডের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা সংরক্ষণের নিয়ম রেখে ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর ১০-১২তম গ্রেডে অপেক্ষমাণ তালিকা বাধ্যতামূলক করার এই উদ্যোগ নেওয়া হলো। নতুন পরিপত্র জারি হওয়ার পর ১০-২০তম গ্রেডের সব নিয়োগেই অপেক্ষমাণ তালিকা রাখতে হবে।
কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা রাখা হলে কোনো দপ্তরে দীর্ঘ দিন পদ ফাঁকা থাকবে না। নিয়োগপ্রার্থীদেরও বারবার আবেদন করতে হবে না।
বর্তমানে কোনো দপ্তরে নিয়োগ দেওয়ার আগে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অনুমোদন নিতে হয়। অনেকসময় এই প্রক্রিয়া শেষ করতেই কয়েক মাস সময় লেগে যায়। নতুন নিয়মে এসব বিলম্ব অনেকটা কমে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিয়োগ প্রক্রিয়া
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একজন সিনিয়র কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ হবে এক বছর। এই সময়ের মধ্যে কোনো পদ ফাঁকা হলে ওই তালিকা থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী তা পূরণ করা হবে। মেধা তালিকায় শীর্ষে থাকা প্রার্থীকে ফোন করে নিয়োগের বিষয়টি জানানো হবে। এরপর রেজিস্ট্রি ডাকে চিঠিও পাঠানো হবে। চিঠি পাওয়ার ১০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রার্থী যোগাযোগ না করলে পরের মেধাক্রমে থাকা প্রার্থীকে নিয়োগের জন্য ডাকা হবে।
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, অপেক্ষমাণ থাকা প্রার্থীদের পরীক্ষার ফলাফল উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কমিটি নিয়োগের জন্য সুপারিশ করবে। এরপর ওই দপ্তরের নোটিশ বোর্ড ও ওয়েবসাইটে প্রার্থীর নাম ও রোল প্রকাশ করে সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীকে তা জানিয়ে দেওয়া হবে। মোবাইল ফোনে এসএমএস দেওয়া হবে।
অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের জ্যেষ্ঠতা প্রথম নিয়োগ পাওয়া প্রার্থীদের পরে নির্ধারিত হবে। অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে একই দিনে একাধিক প্রার্থীকে নিয়োগ দেওয়া হলে নিয়োগ পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
নিয়োগ পরীক্ষায় একই নম্বর পেলে বয়সের ভিত্তিতে প্রার্থীর জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে। কোনো কারণে বয়স একই হলে শিক্ষাগত যোগ্যতা অর্জনের শিক্ষাবর্ষ ভিত্তিতে জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে।
যে পদে নিয়োগের জন্য বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হবে, শুধু ওইসব পদের নিয়োগে অপেক্ষমাণ তালিকা থেকে দেওয়া হবে। বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি অনুসরণ করে নিয়োগের জন্য প্রার্থীদের সুপারিশ করা হবে। এরপর প্রতিটি পদের জন্য দুজন করে প্রার্থীর নাম ও রোল নম্বর পরীক্ষার মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ কমিটির সদস্যদের স্বাক্ষরে সিলগালা করা খামে গোপনীয়ভাবে সংরক্ষণ করা হবে।
অপেক্ষমাণ তালিকার মেয়াদ হবে নিয়োগের সুপারিশ দেওয়ার দিন থেকে এক বছর বা পরবর্তী নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের তারিখের মধ্যে যেটি আগে ঘটে।