চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির অভিযোগ

চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির সব শিক্ষার্থীকে জোর করে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে বাণিজ্য ও মানবিক বিভাগে পড়তে আগ্রহী শিক্ষার্থীরা পড়েছে চরম দুশ্চিন্তায়।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের দাবি, স্কুলটিতে ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক বিভাগের জন্য শিক্ষক সংকট থাকায় স্কুল কর্তৃপক্ষ এই দুটি বিভাগ চালু করতে অনিচ্ছুক। ফলে অনেকে ইতিমধ্যে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট (টিসি) নিয়ে অন্য স্কুলে চলে গেছে, যেখানে তারা পছন্দের বিষয়ে পড়াশোনা করতে পারছে।
তবে স্কুল কর্তৃপক্ষের ভাষ্য, অধিকাংশ শিক্ষার্থী বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে আগ্রহী হওয়ায় কম সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা ক্লাস খোলা সম্ভব নয়।
অভিভাবক নুরুল আলম জানান, তার ছেলে জন্মের পর থেকেই মানসিক প্রতিবন্ধকতায় ভুগছে এবং একারণে পড়ালেখায় অন্য যেকোনো সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে তুলনামূলক পিছিয়ে থাকে। এমন পরিস্থিতিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া তার ছেলের পক্ষে অসম্ভব। বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও তারা শুধু দায়িত্ব নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তিনি জানান, কোনো সমাধান না পেয়ে তিনি চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড ও জেলা প্রশাসকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন, তবে এখনো কোনো সাড়া পাননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক অভিভাবক বলেন, 'স্কুলের প্রভাত ও দিবা শাখা মিলিয়ে ৩৫০-এর বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। লটারি পদ্ধতিতে ভর্তি হওয়ায় সবার পক্ষে বিজ্ঞান বিভাগে পড়া সম্ভব না। অথচ স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো বিকল্প রাখেনি।'
তিনি আরও বলেন, 'যারা বিজ্ঞান বিভাগে ভালো করেছে, তাদেরই সেখানে রাখা যেত। আর যেমন—অষ্টম শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিষয়ে ৫০ শতাংশের নিচে যারা পেয়েছে, তাদের অন্য বিভাগে পাঠানো যেত। এই সাধারণ নিয়মটাও মানা হয়নি।'
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রেহেনা আখতার বলেন, আগে মেধা যাচাইয়ের ভিত্তিতে শিক্ষার্থী ভর্তি হতো এবং প্রায় সবাই বিজ্ঞান বিভাগেই পড়ত। এতে ধীরে ধীরে মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ উঠে যায়।
তিনি জানান, বর্তমানে লটারি ভিত্তিক ভর্তির ফলে বিভিন্ন বৈচিত্র্যের শিক্ষার্থী স্কুলে ভর্তি হয়েছে। তাই নবম শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের পছন্দ জানতে চাওয়া হয়েছিল। মাত্র ১১ জন ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগে আগ্রহ দেখায়। এজন্য এত কম শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা বিভাগ চালু করা সম্ভব না বলে জানান তিনি।
রেহেনা আখতার বলেন, ইতিমধ্যে তিনজন শিক্ষার্থী ট্রান্সফার সার্টিফিকেট নিয়ে স্কুল ছেড়েছে। আমরা বাকি শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে রাজি করিয়েছি, কারণ আমাদের কাছে ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগ চালুর মতো পর্যাপ্ত সুবিধা নেই।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, 'কোনো শিক্ষার্থীকে জোর করে কোনো নির্দিষ্ট বিভাগে পড়ানো যায় না। এটি আইনের বিরুদ্ধে। যদি স্কুলটি বিশেষায়িত না হয়, তবে সেখানে সব বিভাগ চালু রাখার ব্যবস্থা থাকা উচিত।'
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিন বলেন, 'যদি বিজ্ঞান বিভাগ ছাড়া অন্য কোনো বিভাগ খোলার সুযোগ না থাকে, তাহলে স্কুল কর্তৃপক্ষ কীভাবে সব শিক্ষার্থীকে ভর্তি নিল?'
পাশাপাশি, যারা ব্যবসায় শিক্ষা বা মানবিক বিভাগে পড়তে চায়, তাদেরকে প্রয়োজনে বেসরকারি স্কুলে চলে যাওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।