কুয়েটের ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার, খুলে দেওয়া হয়েছে হল

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে সংঘটিত সহিংস ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ১৫ এপ্রিল বহিষ্কৃত ৩৭ শিক্ষার্থীর বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার করেছে।
আজ (২৩ এপ্রিল) অনুষ্ঠিত ১০২তম জরুরি সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ, তথ্য ও প্রকাশনা বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত জনসংযোগ কর্মকর্তা শহীদুজ্জামান শেখ।
একই বৈঠকে ২৫ ফেব্রুয়ারি বন্ধ করে দেওয়া সাতটি আবাসিক হল পুনরায় খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষার্থীরা ১৫ এপ্রিলই হলগুলোতে জোরপূর্বক প্রবেশ করেন।
এদিকে কুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাসুদের অপসারণ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীদের একটি অংশ লাগাতার অনশন চালিয়ে যাচ্ছে। তবে আজকের সিন্ডিকেট সভায় উপাচার্য অপসারণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা, সে বিষয়ে সভার কোনো সূত্র কিছু জানাতে রাজি হননি।
সন্ধ্যায় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে একটি প্রতীকী কফিন মিছিল বের করে।

এই প্রেক্ষাপটে কুয়েট আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও। কুয়েট শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থীও অনশনে বসেছেন।
এর আগে গতরাতে একদল শিক্ষার্থী রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে কুয়েট ভিসির অপসারণ দাবি করেন।
এছাড়া, কুয়েট শিক্ষার্থীদের সাথে সংহতি প্রকাশ করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কিছু সংখ্যাক শিক্ষার্থী অনশন কর্মসূচি পালন করছেন।
আজ (২৩ এপ্রিল) সকাল ১০টার দিকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাবি শিক্ষার্থীরা তাদের অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
তীব্র গরমে অনশনে অংশ নেওয়া একাধিক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়লেও কুয়েট প্রশাসন এখনও আন্দোলনকারীদের দাবিতে সাড়া দেয়নি।
এই অবস্থায় আজ আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে কুয়েট ক্যাম্পাসে আসেন শিক্ষা উপদেষ্টা সি আর আবরার। তিনি শিক্ষার্থীদের অনশন প্রত্যাহারের আহ্বান জানালেও তারা তা প্রত্যাখ্যান করেন।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা আপনাদের কথা শুনে যথাযথ পদক্ষেপ নেব। আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, নয়তো তড়িঘড়ি সিদ্ধান্ত আদালতে টিকে না।'
তিনি জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং অচিরেই সেই কমিটি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করবে।
তবে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তারা আর অপেক্ষা করতে রাজি নন।
এক শিক্ষার্থী বলেন, 'আমরা দুই মাস ধরে আন্দোলন করছি, তবু আমাদের দাবিগুলো মানা হয়নি। আপনারা আপনাদের কাজ চালিয়ে যান, তবে ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমরা এই অনশন চালিয়ে যাব, মৃত্যুর দিকেও যদি এগোতে হয় তবুও।'
২১ এপ্রিল সোমবার দুপুর ৩টা থেকে শুরু হওয়া এই অনশনে ৩২ শিক্ষার্থী অংশ নেন। এরমধ্যে এখন পর্যন্ত পাঁচজন অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন এবং আরও দুইজন শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বাড়ি ফিরে গেছেন।
যে কারণে এই আন্দোলন
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষে শতাধিক ব্যক্তি আহত হন।
পরদিন শিক্ষার্থীরা সব একাডেমিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেন। ওই দিন সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়।
২৫ ফেব্রুয়ারি কুয়েটের ৯৯তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
পরদিন সকাল ১০টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল করেন।
গত ১৪ এপ্রিল বিকেলে কুয়েটের ১০১তম (জরুরি) সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।