ভবিষ্যতের স্বৈরশাসন ঠেকাতে রাষ্ট্র কাঠামোয় আমূল সংস্কারের দাবি এনসিপির

এনসিপি যে ধরনের সংস্কার চায় তার মাধ্যমে রাষ্ট্র কাঠামোর গুনগত পরিবর্তন করা সম্ভব বলে জানিয়েছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, 'আমরা যে ধরনের সংস্কার চাইছি, তাতে রাষ্ট্র কাঠামোর গুণগত পরিবর্তন সম্ভব হবে। অতীতে আমরা দেখেছি, সংবিধান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয়করণ হয়েছে। সংবিধানে একব্যক্তি কেন্দ্রিক শাসনের বীজ রোপণ ছিল, ফলে সেই রাষ্ট্রকাঠামোকে অক্ষুণ্ন রেখে যে-ই ক্ষমতায় যাক তার ভেতরেও ফ্যাসিবাদী প্রবণতা থাকবে, স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে ওঠার প্রবণতা থাকবে।'
আজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদের এলডি হলে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এক সংলাপের বিরতিতে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, রাষ্ট্রীয় কাঠামোর সংস্কার, সংবিধানের সংশোধন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, বিচারব্যবস্থা ও নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে এনসিপি বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।
এছাড়া তত্ত্বাবধায়ক বা অন্তর্বর্তী সরকারের আগে 'নির্বাচনকালীন' শব্দটি যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক প্রস্তাবনায় অন্তর্বর্তী সরকারকে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার অথবা নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বলতে হবে। নির্বাচন শব্দটি সাথে যুক্ত করে শুধুই নির্বাচনের দায়িত্বটি তারা পালন করবে, এ দিকটিতে আমরা গুরুত্বারোপ করেছি। এই সরকারের রূপরেখা কী হবে, প্রধান উপদেষ্টা কিংবা অন্য উপদেষ্টারা কীভাবে আসবে সেটা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করেছি।'
আখতার হোসেন বলেন, 'এখন পর্যন্ত সংবিধানের আলোচনা হয়েছে। জনপ্রশাসন, দুদক, বিচারবিভাগ নিয়ে আলোচনা শুরু হয়নি। পুলিশের রিপোর্ট কেন উত্থাপন হয়নি সেটি জিজ্ঞেস করা হয়েছে। বর্তমান সংবিধানের মৌলিক সংস্কার, গণপরিষদ নির্বাচনের বাস্তবতা, কীভাবে সংবিধান পুনর্লিখন করা যায় এগুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।'
আলোচনার অগ্রগতির ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলে গণমাধ্যমকে জানানো হবে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যে ম্যান্ডেট নিয়ে এসেছে তাতে বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান করেই নির্বাচনের দিকে যেতে হবে। কাজের ভিত্তিতে সরকার সময় পাবে। বিচার ও সংস্কার দৃশ্যমান করার ক্ষেত্রে আমরা জোর দিচ্ছি।'
দলটির মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, সংস্কার কমিশনের দেওয়া ১৬৬টি সুপারিশের মধ্যে ১২৯টিতে আমরা একমত হয়েছি। তবুও কিছু বিষয়ে আমাদের নিজস্ব মতামত থাকবে।
তিনি জানান, সংলাপে তিনটি মূল বিষয়ের ওপর আলোচনা হয়েছে—নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা, শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর এবং সংসদের স্থিতিশীলতা।
হাসনাত বলেন, 'পিসফুল পাওয়ার ট্রান্সজিশন (শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর) নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হয়েছে। কারণ পাওয়ার ট্রানজিশনের সময় গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তৃতীয়ত, সংসদের স্থিতিশীলতা নিয়ে কথা হয়েছে। আর্টিকেল ৭০ এবং সাংসদদের স্বাধীনতা দিয়ে সংসদ আরও কীভাবে কার্যকর করা যায় সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।'
তিনি বলেন, 'আমরা একটিই নির্বাচন চাচ্ছ, যেটি হবে আইনসভার নির্বাচন একইসাথে গণপরিষদের ম্যান্ডেট থাকবে। একইসাথে আইনসভা ও গণপরিষদের স্ট্যাটাস থাকবে। যেটি সংবিধান পুনর্লিখন করবে এবং পার্লামেন্টের রুটিন ওয়ার্ক করবে।'
বিএনপি এই প্রস্তাবে রাজি না হলে কীভাবে সেটি বাস্তবায়ন হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যে পৌঁছাতে হবে, অভ্যুত্থান কেন হয়েছে এটা বুঝতে হবে। জাতীয় স্বার্থে আমাদের ঐক্যমতে আসতে হবে।
সমন্বয় কমিটির প্রধান সারোয়ার তুষার বলেন, একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুইবার প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে আমরা এখনো সেই অবস্থানে অটল আছি।