আবারও রণক্ষেত্র শরীয়তপুর: জাজিরায় দুই পক্ষের সংঘর্ষে ১০০-র বেশি ককটেল বিস্ফোরণ

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় আবারও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল (১৩ এপ্রিল) উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের চব্বিশপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটে। এ সময় প্রায় ১০০টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে বলে জানা গেছে।
সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত দুইজন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে, ১৯ বছরের এক তরুণ গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। তার হাতে একটি বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার কারণে তার কব্জিতে মারাত্মক আঘাত লাগে।
এর আগে, গত ৫ এপ্রিল জাজিরার বিলাশপুরে সংঘর্ষের ঘটনায় খইয়ের মতো শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে একই উপজেলায় আবারও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটল।
ওই সংঘর্ষের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, দুই পক্ষের সদস্যরা একটি খোলা মাঠে একে অপরকে কোঁচ, দা, ও লাঠি নিয়ে আক্রমণ করছে। কিছু মানুষ হেলমেট পরা অবস্থায় বালতি থেকে বোমা ছুঁড়ছেন। ভিডিওতে বিস্ফোরণের শব্দ ও ধোঁয়া দেখা যায় এবং শব্দ শোনা যায়।
এ ধরনের সহিংসতার পুনরাবৃত্তি নিয়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, ওই এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করা নিয়ে দুটির পক্ষের বিরোধ রয়েছে। এর একটি পক্ষের নেতৃত্বে আছেন ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিঠুন ঢালী ও স্থানীয় ওয়ার্ড সদস্য হালিম তালুকদার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর ওই দুই নেতা আত্মগোপনে আছেন।
তাদের অনুপস্থিতিতে এখন স্থানীয় পর্যায়ে দুই পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন জসিম তালুকদার ও নুর আলম সরদার।
শনিবার রাতে জসিম তালুকদারের পক্ষের লোক সজল চোকদারকে মারধর করলে এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। রোববার দুপুরে দুই পক্ষের লোকজন ককটেল বোমা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষের প্রস্ততি নেয়।
এ সময় জসিম তালুকদারের পক্ষের লোক সাব্বির খালাসির হাতে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে তার হাতের কব্জিতে গভীর ক্ষত তৈরি হয়। তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়া হয়েছে।
এরপর দুই পক্ষের সমর্থকরা ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া এবং ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। পরে পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলাকায় গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
জাজিরায় পুনরায় সংঘর্ষের ঘটনায় সেনাবাহিনী, র্যাব ও পুলিশের সমন্বয়ে এলাকায় যৌথবাহিনীর অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। তবে, অভিযানে যৌথবাহিনীর সদস্যরা কোন অস্ত্র উদ্ধার ও কাউকে আটক করতে পারেননি।
স্থানীয়রা জানান, অনেক স্থানীয় ব্যক্তি গ্রেপ্তার আতঙ্কে আত্মগোপনে চলে গেছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী দলগুলোর বক্তব্য নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। তাদের মোবাইল ফোনগুলোও বন্ধ পাওয়া গেছে।
জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ দুলাল আখন্দ আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, "অনেক ককটেল বিস্ফোরিত হয়েছে। খবর পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।"
তিনি বলেন, "পরে একটি যৌথ অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং অভিযুক্তদের শনাক্ত করে গ্রেপ্তারের কাজ চলছে।"
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।