শরীয়তপুরে আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষ: শতাধিক হাতবোমা বিস্ফোরণ, আহত ১৬
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার মুলাই বেপারীকান্দি এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। শনিবার সকাল ৯টার দিকে কুদ্দুস বেপারী ওরফে 'বোমা কুদ্দুস' ও জলিল মাদবরের অনুসারীদের মধ্যে এ সংঘর্ষ ঘটে। এতে নারীসহ অন্তত ১৬ জন আহত হয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সংঘর্ষে দেশীয় অস্ত্রের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক হাতবোমা ও ককটেল ব্যবহার করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এলাকায় টহল দিচ্ছে।
আহতদের বাড়ি বিলাসপুর ইউনিয়নে। তারা জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। মারাত্মক আহত অবস্থায় মারুফ মাল (২৫) নামের এক ব্যক্তিকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে।
সংঘর্ষের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই ভিডিওতে দেখা গেছে, উভয় পক্ষের লোকজন একটি খোলা মাঠে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে।
দুই পক্ষের অনেককে হাতে বালতি নিয়ে হেলমেট পরা অবস্থায় দেখা গেছে। তারা বালতি থেকে হাতবোমা নিক্ষেপ করছিলেন। ফুটেজে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ দুলাল আখন্দ বলেন, পরিস্থিতি বর্তমানে নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এই দুই পক্ষের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজকের এ সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জড়িতদের শনাক্তে কাজ করছে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নে দীর্ঘ এক যুগ ধরে প্রভাব বিস্তার নিয়ে কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবরের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। কুদ্দুস বেপারী বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। প্রতিদ্বন্দ্বী জলিল মাদবর গত নির্বাচনে পরাজিত হন। দুজনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এ এলাকায় প্রভাব বিস্তার নিয়ে মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ হয়। অভিযোগ রয়েছে, উভয় পক্ষই বোমা তৈরির প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। কেউ কারো চেয়ে কম দেখাতে চায় না। সামান্য বিরোধেও বালতির পর বালতি বোমা ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক ছড়ানো হয়।
মুলাই বেপারীকান্দির বাসিন্দা আব্দুল সাত্তার বেপারী বলেন, এখানে জমি-জমা বা টাকার জন্য মারামারি হয় না। পুরো বিষয়টাই মাতুব্বরি নিয়ে। দুই পক্ষই বোমা ফাটিয়ে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করে। আমরা এলাকাবাসী সবসময় আতঙ্কে থাকি। প্রশাসন কি এসব দেখে না? আমরা এই বোমা আতঙ্ক থেকে বাঁচতে চাই।
বিলাসপুর গ্রামের বাসিন্দা রোজিনা বেগম বলেন, সকাল থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে বোমা ফাটিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়। ছেলে-মেয়েদের নিয়ে আমরা ভয়ে ঘরে আছি। কেউ ঘর থেকে বের হতে পারছে না। বছরের পর বছর এমন আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটে আমাদের।
সংঘর্ষে জড়িত কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আশিক মাহমুদ বলেন, স্থানীয় কোনো বিরোধকে কেন্দ্র করেই এ সংঘর্ষ ঘটে থাকতে পারে। দীর্ঘদিন ধরেই কুদ্দুস বেপারী ও জলিল মাদবরের মধ্যে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চলে আসছে। তারই ধারাবাহিকতা আজকের এই ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনা নিয়ন্ত্রণে টহল দিচ্ছেন। এই মুহূর্তে পরিবেশ শান্ত। জড়িতদের শনাক্তে কাজ চলছে।