এ বছর বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকায় ধান, ৪৯ টাকায় চাল কিনবে সরকার

এ বছর বোরো মৌসুমে ৪৯ টাকা কেজি দরে চাল সংগ্রহ করবে সরকার। আর বোরো ধান ও গম সংগ্রহ করা হবে ৩৬ টাকা কেজি দরে।
গত বছর বোরো মৌসুমে ৪৫ টাকা কেজি দরে চাল ও ৩২ টাকা কেজি দরে ধান সংগ্রহ করা হয়েছিল। সে হিসাবে এ বছর কেজিতে ৪ টাকা বেশিতে ধান চাল সংগ্রহ করা হবে।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে আজ বুধবার সচিবালয়ে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির বৈঠকে ধান-চালের দাম নির্ধারণ করা হয়।
সভা শেষে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সাংবাদিকদের জানান, ৩৬ টাকা কেজি দরে সাড়ে ৩ লাখ মেট্রিক টন বোরো ধান এবং ৪৯ টাকা কেজি দরে ১৪ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হবে। আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে বোরো ধান চাল সংগ্রহ কার্যক্রম শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলবে।
তিনি আরও জানান, ৩৬ টাকা দরে গম কেনা হবে। তবে সরকারিভাবে কি পরিমাণ সংগ্রহ করা হবে, সেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়নি।
গত বছর বোরো মৌসুমে ৫ লাখ টন ধান, ১১ লাখ টন সিদ্ধ চাল ও ১ লাখ টন আতপ চালসহ ১৭ লাখ টন ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর প্রতি কেজি বোরো ধান ৩২ টাকা, সিদ্ধ চাল ৪৫ টাকা এবং আতপ চাল ৪৪ টাকা দরে কেনে সরকার।
খাদ্য উপদেষ্টা বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয় যে উৎপাদন খরচ দিয়েছে তার সঙ্গে কৃষকের লাভ যুক্ত করে ধান-চালের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। হাওরে ধান কাটা শুরু হয়েছে। পহেলা বৈশাখ থেকে পুরোদমে শুরু হবে। ২৪ এপ্রিল থেকে সংগ্রহ অভিযান শুরু হবে। উত্তরবঙ্গে একটু দেরিতে শুরু হবে।
কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, আশা করছি তার থেকে বেশি উৎপাদন হবে।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার সুনামগঞ্জে ধান কাটার উৎসবে যাবেন বলেও জানান তিনি।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ৯ মার্চ ঢাকা মহানগরের খুচরা বাজারগুলোতে চায়না, স্বর্ণা জাতের প্রতি কেজি মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা দরে। আর মাঝারি মানের প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা দরে।
খুচরা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, পাইকারি পর্যায়ে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৩৫০ টাকা থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা দরে। আর মাঝারি মানের প্রতি বস্তা চাল বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৯৫০ থেকে ৩ হাজার ১৫০ টাকা দরে।
এ বছর আমন মৌসুমে সরকার প্রতি কেজি ধান ৩৩ টাকা, প্রতি কেজি সিদ্ধ চাল ৪৭ টাকা ও আতপ চাল ৪৬ টাকা দরে সংগ্রহ করেছে।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ করে সরকার।
কিন্তু বাজারের তুলনায় সরকারের ধান ও চালের সংগ্রহ মূল্য কম হওয়ায় খাদ্য অধিদপ্তর লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আমন মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহ করতে পারেনি। যে কারণে সরকার বিদেশ থেকে চাল আমদানি করছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, আমন মৌসুম থেকে খাদ্য অধিদপ্তর ৪ লাখ ৩৫ হাজার ২৬০ টন সিদ্ধ চাল সংগ্রহ করেছে। যদিও সিদ্ধ চাল সংগ্রহের লক্ষ্য ছিল ৫.৫০ লাখ টন। আর আতপ চাল সংগ্রহ করেছে ৮৩ হাজার ৬১ টন।
সরকার অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ১ লাখ টন আতপ চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল। আর সাড়ে ৩ লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে খাদ্য অধিদপ্তর সংগ্রহ করতে পেরেছে মাত্র ২৬ হাজার ৭১৪ টন।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরকার ৮ লাখ চাল বিদেশ থেকে আমদানির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এর মধ্যে গত ৭ এপ্রিল পর্যন্ত ৫.১৮ লাখ টন চাল আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ করেছে খাদ্য অধিদপ্তর। যার বেশিরভাগ চাল দেশে এসে পৌছেছে। আর ৪.০৮ লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে।