অফিসার্স অ্যাড্রেস: ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের পর ব্যারাকে ফিরে যেতে চায় সেনাবাহিনী

সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দ্রুত গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে তারা ব্যারাকে ফিরে গিয়ে তাদের মূল দায়িত্বে মনোনিবেশ করতে পারেন।
সূত্রমতে, অফিসাররা স্পষ্টভাবে জানিয়েছেন, ডিসেম্বরের মধ্যে প্রত্যাশিত সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর তারা ব্যারাকে ফিরে যেতে চান। উল্লেখ্য, গত বছর সেনাপ্রধান বলেছিলেন, ১২ থেকে ১৮ মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়া উচিত।
গতকাল (২৪ মার্চ) ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের সেনা প্রাঙ্গণে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে অনুষ্ঠিত অফিসার্স অ্যাড্রেসে এ কথা বলেন সেনা কর্মকর্তারা।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হলো।
জুলাই অভ্যুত্থানের সংগঠকদের একাংশ সেনাবাহিনীকে 'রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের' যে দায় দিয়েছেন, সেই 'অন্যায্য অভিযোগ' নিয়ে বৈঠকে হতাশা প্রকাশ করেন কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা সেনাবাহিনীকে 'জাতীয় ঐক্যের প্রতীক' হিসেবে উল্লেখ করে এ ধরনের বক্তব্য বন্ধের আহ্বান জানান।
অতীতের জাতীয় সংকটের সময় সেনাপ্রধানের নেতৃত্বের প্রশংসা করে কর্মকর্তারা তাকে সাংবিধানিক ক্ষমতার মধ্যে থেকে জাতীয় স্বার্থ, জনশৃঙ্খলা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানান।
তারা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও সর্বজনগ্রাহ্য নির্বাচনি প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে আইনি ও সাংবিধানিক পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তার ওপরও জোর দেন।
সভায় শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সশরীরে অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে সব স্তরের সেনাসদস্যরাই ভার্চুয়ালি এতে যোগ দেন।
এর আগে গত ২৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাওয়া ক্লাবে এক অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, 'আমার অন্য কোনো আকাঙ্ক্ষা নাই, একটাই আকাঙ্ক্ষা। …আমি চাই দেশ এবং জাতিকে একটা সুন্দর জায়গায় রেখে আমরা সেনানিবাসে ফেরত আসব।'
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমরা দেশে নির্বাচনের দিকে ধাবিত হচ্ছি। আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, হি কমপ্লিটলি অ্যাগ্রিড উইথ মি, দেয়ার শুড বি ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশন অ্যান্ড দ্যাট ইলেকশন শুড বি উইদিন ডিসেম্বর অর... (আমি যতবারই ড. ইউনূসের সঙ্গে কথা বলেছি, তিনি সম্পূর্ণভাবে আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন যে, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন হওয়া উচিত এবং সেই নির্বাচন হওয়া উচিত ডিসেম্বরের মধ্যে বা...)। যেটা আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে, ১৮ মাসের মধ্যে একটা ইলেকশন। আমার মনে হয়, সরকার সেদিকেই ধাবিত হচ্ছে।'
২০২৪ সালের ১৯ জুলাই 'কোটা আন্দোলনে' নিয়ন্ত্রণের জন্য—পরে যা শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে পরিণত হয়—সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়েছিল। এরপর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব নিয়ে মাঠে আছে সেনাবাহিনী।
তবে ২০২৪ সালের ৩ আগস্ট আরেকটি অফিসার্স অ্যাড্রেসে সেনাপ্রধান বলেছিলেন, 'বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের প্রয়োজনে সবসময় জনগণের পাশে থাকবে।' ওই বৈঠকের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয় এবং শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন।