বাজেটে ‘অত্যাচারের কর’ চালুর প্রস্তাব দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের

কর খেলাপি, ঋণ খেলাপি, কালো টাকার মালিক ও অর্থ পাচারকারীদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে ও তাদের জব্দ করা সম্পদ বিক্রি করে আগামী অর্থবছরের বাজেটে 'অত্যাচারের কর' বা 'দুর্নীতির কর' নামে রাজস্ব খাতে আয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের সম্মানীয় ফেলো (সিপিডি) ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য।
আজ শনিবার (৩১ মে) বিএফডিসি-তে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত 'রাজস্ব আহরণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রাক-বাজেট ছায়া সংসদ' বিতর্ক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'অত্যাচারের কর বা দুর্নীতির কর নামে এসব টাকা রাজস্ব আহরণ হিসেবে আনতে পারলে নৈতিক অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখা সম্ভব হতো। আগামী বাজেটে এটি না হলেও ভবিষ্যতে আমাদের এটি করতে হবে।'
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বৈদেশিক খাতে কিছুটা কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরে এসেছে উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'এই সময়ে সরকার ৫ বিলিয়ন ডলারের ওপর বিদেশি দেনা পরিশোধ করেছে। এগুলো পরিশোধ করতে না পারলে এখন জ্বালানি আমদানি করা খুবই কঠিন হয়ে যেতো।'
আগামী অর্থবছরের জন্য একটি গতানুগতিক বাজেট প্রণয়ন হতে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'বাজেট যেমন হওয়া দরকার ছিল, তা হচ্ছে না। দেশের ৮৫% সম্পদ ১০% লোকের হাতে চলে গেছে, কিন্তু বরাবরের মতো এবারও পরোক্ষ করের উপর নির্ভরশীল বাজেট হচ্ছে।'
তিনি বলেন, 'আগের সরকারের নেওয়া ৪০ শতাংশ প্রকল্পের অর্থ ব্যয়ই ছিল ভুয়া। বর্তমান সরকার বলেছিল যে, সেগুলো এ, বি, সি, ডি ক্যাটাগরি করে সেগুলোর অর্থায়ন নিয়ন্ত্রণ করবে। কিন্তু প্রকল্পগুলোতে এখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এতে সন্দেহ হয় যে, এই সরকারের গরীব ও বৈষম্যবিরোধী চরিত্রটা আরও বাড়লো কি-না।'
সরকারের ব্যয়ের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনা না গেলে করদাতারা কর দিতে উৎসাহিত হন না উল্লেখ করে ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ঘাটতি অর্থায়ন মেটাতে পুরোটাই ব্যাংক থেকে ঋণ নিচ্ছে। তারা বিদেশি অর্থায়ন ব্যয় করতে পারছে না। এমনিতেই ব্যাংকগুলো অনেক দুর্বল। এই সময়ে ব্যাংক থেকে সরকার এতো বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হবে।'
এছাড়া, দ্রুত জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে মত দিয়ে তিনি বলেছেন, 'আমাদের দ্রুত একটি কায়া সংসদ দরকার। সরকার অন্য অনেক বিষয় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করছে। কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেট প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকার কোন আলোচনা করেনি।'
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে বাজেট প্রণয়ন করা হলে বাজেটে সরকারের গৃহীত উদ্যোগগুলোর ধারাবাহিকতা পেতো এবং ব্যবসায়ীদেরও আস্থা বাড়তো বলে মনে করেন তিনি।
ড. দেবপ্রিয় বলেন, 'অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা ও ব্যক্তিখাতের বিনিয়োগের জন্য সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা রক্ষায় নির্বাচন প্রয়োজন। বিনিয়োগ সম্মেলনের সময় বিনিয়োগকারীরা আমাদের কাছে জানতে চেয়েছেন যে, এই সরকার যেসব সংস্কার করছে, রাজনৈতিক সরকার এসে সেগুলোর ধারাবাহিকতা রক্ষা করবে কি-না।'
তিনি বলেন, 'আমার খুবই আশা ছিল, আগামী বাজেটে আয়ের একটি নতুন খাত উন্মোচিত করবে সরকার। সেটি হলো, যারা অবৈধভাবে আয় করেছে, কর খেলাপি, ঋণ খেলাপি ও বিদেশে পাচারকারীদের কাছ থেকে আদায় করা অর্থ এবং তাদের জব্দ করা সম্পদ বিক্রি করে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রি করে বাজেটে আয়ের একটি নতুন খাত হিসেবে দেখানো হবে। এটি কীভাবে দেখানো যাবে, সে বিষয়ে আমাদের ২০ বছর আগের অভিজ্ঞতা রয়েছে।'